নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফরিদপুরে আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্বহাকে ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় বিক্ষুব্ধরা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছে। এ সময় তারা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। রোববার সন্ধ্যায় ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ওই এলাকার নিরাপত্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।
রোববার সন্ধ্যায় ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর এলাকায় নির্মাণাধীন আমজাদ সরদারের জুট মিল মাঠে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মারকাযুত তাকওয়া ইসলামি মাদ্রাসা ও সরদার বাড়ি জামে মসজিদের উদ্যোগে ওই মহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল ইসলামি বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মদ আদনানের। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওয়াজ মহফিল মঞ্চে থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় প্রশাসনের আপত্তির কারণে আবু ত্বহা মুহাম্মদ বক্তব্য দেবেন না। পরে ওয়াজ মাহফিল সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই সময় মাঠে প্রায় ১০ হাজার শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন। এ ঘোষণায় তাদের কিছু অংশ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা পাশের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং মহাসড়কে সব ধরনের যান বাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের একটি ক্ষুদ্র অংশ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত করিমপুর পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করে। বিক্ষুব্ধরা ফাঁড়িতে থাকা পুলিশের দুটি গাড়ি ও একটি অ্যাম্বুলেন্সের কাচ ভেঙে ফেলে। পরে ফরিদপুর থেকে দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শটগানের গুলি ছুড়ে রাত সোয়া ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।
করিমপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন শাহ বলেন, পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশ সদস্যদের আহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ ওয়াজ মাহফিল আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন আমজাদ সরদারের ছেলে রকিব আল হাসান সরদার। ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানান, আবু ত্বহাকে নিয়ে পুলিশ সীমিত পরিসরে ঘরোয়াভাবে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়েছিল। তবে রোববার ওয়াজ মাহফিল চলাকালে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ওসি ফোন করে বাবাকে বলেন, আবু ত্বহাকে মঞ্চে ওঠানো যাবে না। তখন বাবাকে মামলার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে আমরা মাহফিলে বিষয়টি ঘোষণা দিলে সমবেতদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
রকিব আল হাসান সরদারর আরও বলেন, যারা ফাঁড়িতে হামলা ও সড়ক অবরোধ করেছে তারা উগ্রপন্থি। তাদের সঙ্গে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজকদের কোনো সম্পর্ক নেই। পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে পারবে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলার নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা ঠিক হবে না।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ওয়াজ মাহফিল করতে হলে উপজেলা থেকে অনুমতি নিতে হয়। ত্বহাকে আনার ব্যাপারে প্রশাসন কোনো অনুমতি দেয়নি। ওই ওয়াজ মাহফিলের ব্যাপারেও কোনো অনুমতি ছিল না।
ফরিদপুর কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল বলেন, বর্তমানে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়নে করা হয়েছে। এ ঘটনায় করিমপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন শাহ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিএসডি/এলএল