নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্বিমুখী সংকটে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানীর বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)। এর একদিকে আছেন শিক্ষার্থীরা, আরেকদিকে শিক্ষক। প্রথমে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। সরাসরি পদ্ধতির পরিবর্তে অনলাইনে পরীক্ষার দাবি ছিল তাদের। শিক্ষকরা এ দাবি নাকচ করে দেন। এরপরও পরিস্থিতি পর্যালোচনায় রোববার সকালে তারা প্রশাসনিক ভবনে বৈঠকে বসলে তাদেরকে বিদ্যুৎ, পানিবিহীন প্রায় ১৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাত ১২টায় দাঙ্গা পুলিশের হস্তক্ষেপে শিক্ষকরা মুক্ত হন। এ সময় শাকিল ও মাসুদ রানা নামে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করেন। দায়ী শিক্ষার্থীদের বিচার না করা পর্যন্ত শিক্ষকদের এই কর্মসূচি চলবে তারা ঘোষণা দিয়েছেন।
দুপক্ষের এই মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ক্যাম্পাসে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন আছে। কর্তৃপক্ষ তিনটি ব্যাচের অবৈধ ছাত্রদের সোমবার দুপুরের মধ্যে একমাত্র আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা জারি করে। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখাকালে অনেকেই হল ছেড়ে গেছে বলে জানা গেছে।
বুটেক্সের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ছাত্ররা এর আগে অনলাইনের পরিবর্তে সরাসরি পরীক্ষার দাবি করেছে। এখন আবার অনলাইনে পরীক্ষা চাচ্ছে। তারা যে কোনো দাবি করতেই পারে। কিন্তু তা যৌক্তিক হওয়া উচিত। তিনি ছাত্র ও শিক্ষক উভয়পক্ষকে যৌক্তিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আশা করি, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিস্থিতি চলছে তা অবিলম্বে নিরসন হবে।
জানা গেছে, করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো বুটেক্সও শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পরীক্ষা নেয়। তখন বুটেক্সসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সরাসরি পরীক্ষার দাবি তোলে এবং ক্যাম্পাস খুলে দিতে রাজপথে নামে। নাম প্রকাশ না করে বুটেক্সের একাধিক শিক্ষক জানান, ছাত্ররা অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার মজা পেয়েছে। সেটার মূল্যায়ন তারা করতে চান না। কিন্তু সরাসরি ক্লাস ও ল্যাবরেটরি ওয়ার্ক যেখানে হয়েছে সেখানে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাই এই পরীক্ষা নিতে তারা আগ্রহী হননি। এরপরও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বসা হয়। কিন্তু সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত তাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সবচেয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ ছিল প্রশাসনিক ভবনের পানি ও বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ওই শিক্ষক নেতা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাত ১১টায় বিষয়টি অবগত হওয়ার পর হস্তক্ষেপ করে। দাঙ্গা পুলিশ এসে শিক্ষকদের উদ্ধার করে। নইলে তারা সোমবারও অবরুদ্ধ থাকতেন। তবে সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যত্র। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী আন্দোলনে যোগ দেয়। তাই কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে আর শিক্ষকদের দাবি কোনপথে পূরণ হবে সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে সামনে এসেছে।
উপাচার্য অধ্যাপক অধ্যাপক আবুল কাশেম বলেন, ছাত্ররা যে দাবি তুলেছিল সেটা ছিল স্ববিরোধী। আবার তাদের বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসে শিক্ষকরা অসৌজন্যমূলক আচরণের স্বীকার হয়েছে। এখন দ্বিমুখী সংকট থেকে বের হওয়ার পথ খোঁজা হচ্ছে।
বিএসডি/ এলএল