নিজস্ব প্রতিবেদক
নতুন বছরের শুরুতে বাংলাদেশিদের জন্য ই–ভিসা সুবিধা চালু করে ঢাকার থাই দূতাবাস। অনলাইনে আবেদন করলে ১০ দিনের ভেতর বাংলাদেশি সাধারণ পাসপোর্টধারীদের ভিসা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভিসা পাওয়া না পাওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক-নেতিবাচক বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।
কোনো কোনো আবেদনকারী বলছেন, অনলাইনে আবেদনের দুই থেকে তিন দিনের মাথায়ও কেউ কেউ ভিসা পেয়েছেন। আবার অনেক আবেদনকারীর অভিযোগ, পেমেন্ট জটিলতার কারণে তাদের আবেদন আটকে যাচ্ছে। যার কারণে তারা ভিসা পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন।
আবেদনকারীরা বলছেন, থাই কর্তৃপক্ষ ভিসা পেমেন্টের জন্য ব্যাংক নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। পেমেন্টের জন্য মাত্র তিন ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আর দিনে সর্বোচ্চ ৪০০ ভিসা আবেদনের কোটা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ভিসার জন্য আবেদন করা গেলেও এসব নিয়মের কারণে পেমেন্ট অপশনে গিয়ে আটকা পড়ছেন সেবাপ্রত্যাসীরা। ফলে আবেদন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই মাঝপথে আটকা পড়ে যাচ্ছে। আর আবেদনকারীরা ভিসা পাচ্ছেন না।
থাই ভিসার জন্য আবেদন করেও পেমেন্ট জটিলতার কারণে ভিসা হয়নি ওয়েদ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির। তিনি বলেন, কি কারণে জানি না এই অদ্ভুত অসম ও উদ্ভট ভিসা পেমেন্ট সিস্টেম তৈরি করেছে থাই ভিসা কর্তৃপক্ষ। শুনেছি এই নিয়ম কেবল বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। প্রায় একমাস এই নজিরবিহীন নিয়মের মধ্যে চলছে। অথচ কেউ নেই এই ব্যাপারে সঠিক সুরাহা করতে। পেমেন্ট সিস্টেমের কারণে আমার ভিসাটা হলো না।
আরেক ভুক্তভোগী মো. ওবায়দুল হক বলেন, আমার মনে হচ্ছে, থাই ই-ভিসা এবং পেমেন্টের পেছনে কোনো একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। না হয় আবেদন করার পর দেখি, ওইদিনের ভিসা শেষ। ভিসা কীভাবে দেয় তারা, সেটাই আমার বোধগম্য নয়।
সম্প্রতি থাই ভিসা পেয়েছেন মোহাম্মদ রানা। তিনি বলেন, ১০ জানুয়ারি রেজিস্ট্রেশন করি ১১ জানুয়ারি ফাইল আপডেট করি। ১২ জানুয়ারি পেমেন্ট দিতে পারিনি, পরে ১৩ জানুয়ারি পেমেন্ট করতে পারি। আমার তথ্যগত কিছু ভুল হওয়ায় ভিসা সেন্টার থেকে ফোন করে, তারা আবার তথ্য আপলোড করতে বলে। পুনরায় তথ্য আপলোড করার পাঁচ দিনের মাথায় ভিসা পেয়েছি।
২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য পর্যটক ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারত। চিকিৎসা ও উচ্চশিক্ষা–সংক্রান্ত ভিসা দেওয়া হচ্ছে, তা–ও সীমিত পরিসরে। ফলে ভ্রমণ, কেনাকাটা বা চিকিৎসার জন্য বিকল্প খুঁজছিলেন বাংলাদেশিরা। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশিদের জন্য ২ জানুয়ারি থেকে ই–ভিসা সুবিধা চালু করে থাইল্যান্ড।
থাই ভিসা অনলাইনে আবেদনের প্রক্রিয়াটি দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি অংশে লগইন করে সব ডকুমেন্ট আপলোড করতে হচ্ছে। যেখানে সময় লাগছে মাত্র ১০ মিনিট। এর পরের অংশ হলো পেমেন্ট, যেটির গেটওয়ে শ্রীলঙ্কার কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসি। যাদের বেঁধে দেওয়া তিন ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আবেদন করতে গিয়েই পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকা পড়ছেন গ্রাহকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, থাই দূতাবাসের যে লোকবল তাতে দিনে সর্বোচ্চ ৪০০ ভিসা আবেদন তারা জমা নিতে পারে। কিন্তু এখন ১৭-১৮ হাজার বাংলাদেশির ভিসা আবেদন জমা পড়েছে। এত আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা তাদের এখনও তৈরি হয়নি। এক্ষেত্রে তাদের লোকবল বাড়ানো ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সুযোগ নেই।
বাংলাদেশে থাইল্যান্ডের অনারারি কনসাল আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী জানান, বর্তমানে দিনে থাই কর্তৃপক্ষ ৪০০ ভিসা দিচ্ছে। আমরা থাই কর্তৃপক্ষকে দিনে অন্তত এক হাজার ভিসা ইস্যু করার অনুরোধ করেছি। তাদের যে পরিমাণ লোকবল হয়ত এই মুহূর্তে আমাদের আবেদন রাখতে পারবে না। তবে একটা সময়ে হয়ত দিতেও পারে তারা।
ই-ভিসা প্রক্রিয়া চালুর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে বিদ্যমান আবেদন কেন্দ্রে ভিসা আবেদন গ্রহণ বন্ধ করে দেয় থাই দূতাবাস। আগে বাংলাদেশিরা অনুমোদিত কেন্দ্রের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা দিয়ে থাই স্টিকার ভিসা পেতেন। দিনে গড়ে তখন ৮০০’র মতো ভিসা ইস্যু করা হতো বাংলাদেশিদের জন্য। তাতে অবশ্য আবেদনের পর থেকে একমাসের বেশি সময় লাগত।