খেলাধূলা প্রতিনিধি:
প্রথম ম্যাচের পারফরমেন্সের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৮ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। যা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ক্রিকেটের যে কোন ভার্সনে টাইগার দলের প্রথম জয়। সেই সাথে ১৯ ম্যাচ হারের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসে তারা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগারদের সাত উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ১-১ সমতায় ফেরে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আগামীকাল সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডে। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টায়।
প্রাথমিকভাবে তৃতীয় ওয়ানডে খেলা নিয়ে সংশয় ছিল দলের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। কারণ তার তিন সন্তানের মধ্যে দুইজনসহ পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা নিয়ে দেশে হাসপাতালে রয়েছেন। তাই সাকিবের দেশে ফেরার কথা ছিল, কিন্তু সেখানেই থেকে যাওয়া ও তৃতীয় ওয়ানডে খেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বাংলাদেশ দলের সদস্যরা সিরিজ জয়ের জন্য কতটা অনুপ্রাণিত এবং মরিয়া, সাকিবের এমন সিদ্ধান্ত তার জলন্ত উদাহরণ।
সেঞ্চুরিয়নে প্রথম ম্যাচের ঐতিহাসিক জয়ে বড় ভূমিকা ছিল সাকিবের। ৬৪ বলে ৭৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচের জন্য দর্শকরা আবার সেঞ্চুরিয়নের ফিরে আসবে এবং এটি হবে তাদের জন্য আরেকবার উৎসাহী করার উপায়। সেঞ্চুরিয়নের উইকেট ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য সহায়ক। কিন্তু ওয়ান্ডারার্সের দ্বিতীয় ওয়ানডের উইকেট মোটেও সুবিধাজনক ছিল না। হঠাৎ-হঠাৎ বাউন্স করেছে বলে জানান, বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
যদিও স্পষ্টভাবে পিচ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তামিম। একই সঙ্গে স্বীকার করেছেন, নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছেন নিজেরাই। বল হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন ৩৯ রানে ৫ উইকেট নেয়া কাগিসো রাবাদা। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত ইনিংসে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নেন রাবাদা।
রাবাদার তোপে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এক পর্যায়ে ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তবে পরবর্তীতে আফিফ হোসেনের লড়াকু হাফ-সেঞ্চুরির সাথে মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাট বাংলাদেশকে ৯ উইকেটে ১৯৪ রানের পুঁজি এনে দেয়। ১০৭ বলে ৭২ রান করেন আফিফ। সাথে মিরাজের ৩৮ রান ছাড়া মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ করেন ২৫।
তামিম বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম ২৪০-২৫০ ভাল স্কোর। উইকেট একপ্রান্ত থেকে ঘুরছিল, যেখান থেকে (মেহেদি হাসান) মিরাজ এবং শামসি বেশিরভাগ ওভার বল করেছিলেন। আমি ভেবেছিলাম (ইয়াসির) রাব্বির উইকেট ব্যয় বহুল কারণ, এটি রাবাদার (প্রথম) স্পেলের শেষ বল হতো। সে আরেকটি ওভার বল করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ইয়াসির-মুশফিক জুটিটি বড় হলে স্কোরটা ২৪০-২৫০ করতে পারতাম। আফিফ এবং মিরাজ যেভাবে ব্যাটিং করেছে, তাতে দেখা গেছে তাদের বিপক্ষে মাঝের ওভারগুলোতে প্রচুর রান করা যেত। আমরা জানতাম, তারা নতুন বল নিয়ে আমাদের উপর চাপ বাড়াবে। আমরা প্রথম ম্যাচে বেশি কছু না করেই খুব ভালো করেছিলাম। তাই আমরা মাঝের ওভারগুলো কাজে লাগিয়েছিলাম। দ্বিতীয় ম্যাচে পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। আমরা শুরুতেই অনেক উইকেট হারিয়েছি। মাঝে রান করার মত বেশি ব্যাটার ছিল না।’
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি সেঞ্চুরিয়নে হওয়ার কারণে তামিম সেরা কিছুরই আশা করছেন। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজকে স্মরণীয় করে রাখার আশা ছাড়তে রাজি নন তামিম।
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারের পরও বাংলাদেশ দলে কোন পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। অপরিবর্তিত থাকলে একই স্কোয়াড নিয়েই টানা ছয়টি ম্যাচ খেলবে টাইগাররা।
ওয়ানডে ফরম্যাটে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। এরমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছে ১৮টিতে। বাংলাদেশ জিতেছে পাঁচটিতে। একটি ম্যাচ বাতিল হয়।
বাংলাদেশ দল : তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ, আফিফ হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন চৌধুরি, নাসুম আহমেদ, ইয়াসির আলি চৌধুরি, মাহমুদুল হাসান জয়, সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল : তেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), কেশভ মহারাজ (সহ-অধিনায়ক), কুইন্টন ডি কক (উইকেটরক্ষক), জুবায়ের হামজা, মার্কো জানসেন, জানেমান মালান, আইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার, লুঙ্গি এনগিডি, ওয়েন পারনেল, আন্দিলে ফেলুকুওয়াও, ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, কাগিসো রাবাদা, তাবরাইজ শামসি, রাসি ফন ডার ডুসেন ও কাইল ভেরিনি।
বিএসডি/ এমআর