নিজস্ব প্রতিনিধি:
তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ১৫ হাজার টাকা দিয়ে আমি একটি ফর্ম পূরণ করি। এরপর লোন নেওয়ার জন্য প্রোফাইল মেকিং চার্জের নামে আরও পাঁচ লাখ টাকা চাইলে আমি দুই লাখ টাকা দেই। এরপর ২০ কোটি টাকা লোন পাইয়ে দেওয়ার জন্য লোনের ১ শতাংশ টাকা অগ্রিম চায়, কিন্তু আমি নানাভাবে বলে ১০ লাখ টাকা (০.৫ শতাংশ) পরিশোধ করি।’
শনিবার (৯ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদিন এসব কথা বলেন। ডিএমপি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
জয়নাল আবেদিন বলেন, মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় আমার সাপ্লাইয়ের ব্যবসা ছিল। সাপ্লাইয়ের সাব কন্ট্রাক্টে আমি একটা ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছিলাম। এর জন্য আমার টাকার প্রয়োজন ছিল। কাদের মার্কেটিংয়ের লোক দিয়ে আমাকে তার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে যায়। সেখান থেকে নাম্বার নিয়ে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করি।
ঋণ পেয়েছিন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঋণ পাওয়া তো হয়নি। টাকা পাওয়ার পর থেকে নানা অজুহাতে আমাকে তিনি ঘুরিয়েছেন। তার কাছে টাকা চাইলে বলতেন, করোনার কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে, সব কাগজপত্র তৈরি আছে, আবার কিছুদিন পরে দেবে।
ঢাকার দক্ষিণ খান এলাকার মো. মনির হোসেন নামে আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, আমার এলাকার বনলতা নামে একজন কাদেরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। জলসিড়ি প্রকল্পে ৮৪ কোটি টাকা মূল্যের ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তিনি (কাদের) আমার কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন। তার কাছে টাকা আদায়ের রশিদ চাইলে বলতেন, আমি জনপ্রশাসনের অতিরিক্ত সচিব হয়ে তোমার এই কয়টাকা মারবো নাকি? তিনি বিভিন্ন বড় বড় (উচ্চ পদস্থ) লোকের সঙ্গে তার ছবি দেখাতেন। এতে আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই।
কাজ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ তো আর পাওয়া হয়নি। পরে জানতে পারি তিনি সম্পূর্ণ ভুয়া পরিচয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বিভিন্ন সময়ে তার কাছে গেলে তিনি কিছু টাকা ফেরত দেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এভাবেই ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ এনে দেওয়া, বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ পাইয়ে দেওয়া, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অতিরিক্ত সচিব পরিচয় দেওয়া কাদের। আলোচিত ধনকুবের মুসা বিন শমসের ও ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত জি কে শামিমের আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন এসএসসির গণ্ডি না পেরুনো কাদের।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, আমরা কাদেরকে একদিনে রিমান্ডে নিয়ে অনেক তথ্যই পেয়েছি। মূলত অতিরিক্ত সচিব পরিচয় দেওয়া আবদুল কাদের চৌধুরী দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সুবর্নচরে। তার বাবা ছিলেন মাঝি। কাদেরের প্রত্যেক উপার্জনই ছিল প্রতারণার মাধ্যমে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ১৪ বছর যাবৎ তিনি প্রতারণার মাধ্যমে অঢেল সম্পত্তি বানিয়েছেন। গাড়িতে সচিবালয়ের স্টিকার ও কোটি টাকা দামি প্রাডো গাড়ি নিয়ে চলায় সচিবালয়ে তাকে কেউ সন্দেহের নজরে দেখেনি। গুলশান ১ নম্বর সেকশনের জব্বার টাওয়ারে মাসিক পাঁচ লাখ টাকা ভাড়ায় আলিশান অফিস রয়েছে তার। কারওয়ান বাজারেও তার আরেকটি বিলাসবহুল অফিস আছে। গুলশানেও তার দামি ফ্ল্যাট আছে।
গত বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) রাতে গুলশান ১-এ জব্বার টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে সততা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের এমডি আব্দুল কাদের, চেয়ারম্যান শারমিন আক্তার ছোয়াসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এনএসআইর সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করে ডিবি গুলশান বিভাগ।
বিএসডি / আইকে