আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি রেল স্টেশনে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় এবং ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৫ জনই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
দেশটিতে কুম্ভমেলার পুণ্যার্থীদের ভিড়ের মধ্যে দিল্লি রেলস্টেশনের দুটি প্ল্যাটফর্মে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, শনিবার রাতে মহাকুম্ভের জন্য নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশনে নির্ধারিত দুটি ট্রেন বিলম্বিত হওয়ার কারণে যাত্রীদের মধ্যে আকস্মিকভাবে ব্যাপক ভিড় ও ধাক্কাধাক্কির সৃষ্টি হয় এবং এতে ১১ নারী ও চার শিশুসহ কমপক্ষে ১৮ জন মারা গেছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দিল্লির এলএনজেপি হাসপাতালের চিফ ক্যাজুয়ালটি মেডিকেল অফিসার প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ১০ জন নারী, তিন শিশু ও দুজন পুরুষ নিহত হয়েছেন। লেডি হার্ডিং হাসপাতালে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভারতীয় রেলওয়ে এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি, গুরুতর আহতদের জন্য আড়াই লাখ রুপি এবং সামান্য আহতদের জন্য ১ লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে।
মূলত প্রথমে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। পরে দিল্লি পুলিশ ১৮ জনের প্রাণ হারানোর খবর নিশ্চিত করে।
রেলওয়ে সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনের ১৩ এবং ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কুম্ভমেলার পুণ্যার্থীদের ভিড় ছিল। ওই দুই প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসতে দেরি হচ্ছিল বলেও যাত্রীদের অভিযোগ। কেউ কেউ দাবি করতে থাকেন, দু’টি ট্রেন বাতিল হয়ে গেছে। ফলে ভিড়ের মধ্যে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। অনেকেই দাবি করেন, পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায় ওই দুই প্ল্যাটফর্মে। যদিও ভারতীয় রেলের দাবি এই সবই গুজব ছিল।
এই ঘটনার পরেই শোক প্রকাশ করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, “পদপিষ্টের ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা কররছি। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছে প্রশাসন।”
এছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবও। উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। এছাড়া দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, “দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্টের ঘটনায় মৃত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। মুখ্যসচিব ও পুলিশ কমিশনারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
যদিও উত্তর রেলের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, নয়াদিল্লি স্টেশনে কোনও পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেনি। গুজব ছড়ানোর কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি। রেলের ওই কর্মকর্তা জানান, প্রয়াগরাজে যাওয়ার জন্য দুটি স্পেশ্যাল ট্রেন চালানো হচ্ছে।
এদিকে ভারতের রেল মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, রেল পুলিশ এবং দিল্লি পুলিশের দল নয়াদিল্লি স্টেশনে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি মন্ত্রণালয়ের। এই ভিড়ের মধ্যে পড়ে আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
রেল পুলিশের ডিসি বলেন, “প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস ১৪ নম্বর স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল। স্টেশনে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড় ছিল সেই সময়ে। স্বতন্ত্র সেনানি এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস দেরিতে ছিল। তাই ওই দুই ট্রেনের যাত্রীরাও ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন। ১৫০০ জেনারেল টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সেই কারণেই ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।”