জেলা প্রতিনিধি:
সিলেটের কানাইঘাটের ডনা সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া দুই বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ দুইদিন (৪০ ঘণ্টা) ধরে নো ম্যানস ল্যান্ডে (শূন্যরেখা) পড়ে আছে। বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মরদেহগুলো উদ্ধার করা যায়নি।
মরদেহগুলো সীমান্তের বাংলাদেশ না ভারত অংশে রয়েছে, এ নিয়ে দুদেশের সীমান্ত বাহিনীর দুই রকম বক্তব্য আসায় জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে মরদেহ উদ্ধারে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিজিবি কর্মকর্তা। তবে এ ব্যাপারে জানতে বিজিবি সিলেট সেক্টর কমান্ডার ও ১৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
বুধবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্তের ১৩৩১ নম্বর পিলারের ভারত অংশে দুই বাংলাদেশি যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। তারা বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশকে জানান।
নিহতরা হলেন-কানাইঘাটের লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এরালীগুল গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে আসকর আলী (২৬) ও একই গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে আরিফ হোসেন (২২)।
এদিকে, গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার দুদিন হলেও মরদেহ দুটি উদ্ধার না হওয়ায় নিহতদের স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। যে কোনো মূল্যে মরদেহ দুটি উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) রাতে বাজারে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন আসকর ও আরিফ। এরপর থেকে তারা আর ফিরে আসেননি।
আসকর ও আরিফ মঙ্গলবার রাতে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন বলে ধারণা পুলিশের। ওই রাতে কিংবা বুধবার ভোরের কোনো এক সময়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা সে দেশের খাসিয়া আদিবাসীদের গুলিতে তারা মারা যান।
১৯ বিজিবির সুরইঘাট ক্যাম্পের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দুজনের মরদেহ উদ্ধারে বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবি ও বিএসএফের পতাকা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে হত্যার দায় অস্বীকার করেছে বিএসএফ। এমনকি মরদেহগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মরদেহগুলো ভারতের অভ্যন্তরে রয়েছে।
মরদেহগুলো যে স্থানে পড়ে আছে সেই স্থান কোনো দেশে পড়ে আছে বৈঠকে তা চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, মরদেহ ভারতের অভ্যন্তরে থাকলে সে দেশে ময়নাতদন্ত হবে। এরপর আরেক দফা পতাকা বৈঠক করে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। এতে মরদেহ উদ্ধার ও হস্তান্তরে আরও কিছুদিন লাগতে পারে।
বিএসএফ এ হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার করলেও বিজিবির দাবি, গুলিবিদ্ধ মরদেহ যেহেতু ভারতীয় সীমান্তে পাওয়া গেছে, তাই এর দায় বিএসএফ বা ভারতীয় খাসিয়াদেরই নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মরদেহগুলো সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে এখনো পড়ে আছে। ওই জায়গা ভারতের অভ্যন্তরে হওয়ায় এখনো মরদেহ দুটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মরদেহ উদ্ধারে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে আলোচনা চলছে।
নিহত আরিফের পরিবারের এক সদস্য বলেন, স্থানীয় লালবাজারে যাওয়ার কথা বলে বিকেলে আরিফ ও আসকর বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। ডোনা সীমান্ত এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে তারা শুনেছেন আসকর ও আরিফ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উখিয়াং এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছিলেন। এসময় তাদের ওপর গুলি করে বিএসএফ। ঘটনাস্থলেই দুজন মারা গেলে তাদের মরদেহ সীমান্তের ১৩৩১ মেইন পিলারের পাশে ফেলে রাখা হয়।
বিএসডি / আইকে