গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে একটা প্রবণতা আছে, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেই আগে ড্রাইভারকে ধরে পেটানো হয়। অনেক সময় গণপিটুনি দিয়ে তাকে হত্যাই করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘সবার কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে, দুর্ঘটনাটা কেন কীভাবে কার কারণে ঘটল, সেটা যেন বিবেচনা করেন। সেখানে আমি পথচারীদের বলব, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সকলের জ্ঞান থাকা দরকার। সেটা মেনে চলতে হবে। ট্রাফিক আইন সকলে মেনে চলবেন এবং মোবাইল ফোন কানে নিয়ে সড়কের পাশ দিয়ে বা রেললাইনের পাশ দিয়ে চলা বা পার হতে যাবেন না। এটা বন্ধ করতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘দ্বিতীয় কথা হলো যেখান–সেখান দিয়ে হঠাৎ করে দৌড়ে রাস্তা পার হবেন না। এভাবে রাস্তা পার হতে গেলেই কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে। কাজেই এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। ফুটপাতে হাঁটলে যেদিক থেকে গাড়ি আসছে, তার উল্টো দিকেই হাঁটতে হয়। যাতে সামনে দেখা যায় যে গাড়িটা আসছে। ফুটওভার ব্রিজ এবং আন্ডারপাস বা নির্দিষ্ট স্থান দিয়েই পারাপার হতে হবে। কারণ, একটি যানবাহনে চাইলে অনেক সময় হঠাৎ ব্রেক কষা সম্ভব হয় না। কারণ, এটা যান্ত্রিক বিষয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের আমি বলব, রাস্তায় চলাচলের সময় অবশ্যই ট্রাফিক আইন মানতে হবে। আর শিক্ষার ক্ষেত্রেও আমি বলব, আমাদের তরফ থেকে প্রত্যেকটি স্কুল-কলেজে ট্রাফিক রুলস সম্পর্কে থেকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। প্রত্যেকটি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়েও এই ব্যবস্থা নিতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্কুল ছুটি এবং শুরুর সময় প্রত্যেকটি স্কুল নিজ উদ্যোগে বিশেষ ট্রাফিকের ব্যবস্থা করবে। ট্রাফিক পুলিশ থাকবে সহযোগিতার জন্য, কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষকে যথাযথভাবে সচেতন হতে হবে এবং তাদেরও লোক রাখতে হবে। যাতে ছেলেমেয়েরা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারে। কারণ, অনেক সময় অন্যের কথা তারা শুনতে চায় না। যদি স্কুল কর্তৃপক্ষের কেউ থাকে, তার কথা ছাত্রছাত্রীরা শুনবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রত্যেকটা স্কুলকে নির্দেশ দিতে পারে। একেবারে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা পর্যন্ত।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলব, এ ব্যাপারে আপনারা উদ্যোগ নেবেন এবং প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এই নির্দেশনা দেবেন। তাহলেই আমাদের সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমবে। এ ছাড়া আমাদের ভারী যানবাহনগুলো, বিশেষ করে বাস, ট্রাক, লরি—সেগুলোরও যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি আছে কি না, সেটাও সব সময় পরীক্ষা করতে হবে। এ বিষয়টাও সবাই নজর রাখবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ঘটনায় কোনো গাড়ির ধাক্কায় পথচারী পড়ে গেলে, অনেক সময়ই সে বেঁচে যেতে পারে। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটানোর কারণে প্রাণভয়ে ভীত হয়ে ড্রাইভার নিজের প্রাণ বাঁচাতে গাড়ি যখন আবার টান দেয়, তখন ওই দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তি চাকার নিচে চলে আসে। তার জীবন চলে যায়। কাজেই কিছু হলেই গাড়ির ড্রাইভারকে ধরে পেটাবেন, আগুন দেবেন, গাড়ি পোড়াবেন, এটা কিন্তু ঠিক নয়। কারণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তারাই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টা দেখবেন। কাজেই এ বিষয়ে আমি সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, একটানা গাড়ি চালনা ও অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে দুর্ঘটনা রোধকল্পে ‘টেকসই ও নিরাপদ মহাসড়ক গড়ে তোলার জন্য চারটি জাতীয় মহাসড়কের পার্শ্বে পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য পার্কিং সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও মাগুরায় পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য চারটি আধুনিক সুবিধাসংবলিত বিশ্রামাগার নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত রাখতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে ইতিমধ্যে মেট্রোরেল প্রকল্প, বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে ‘রিভাইসড স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান’–এর আওতায় উড়ালসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, কমিউটার রেলওয়ে, ভূগর্ভস্থ টানেল, ঢাকা শহরের চারদিকে রিং রোড, সার্কুলার রেললাইন, ওয়াটারওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজধানীবাসী নিরাপদে ও দ্রুততম সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন।
বিএসডি/ এলএল