নিজস্ব প্রতিবেদক
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দেশে নতুনভাবে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি-লুটপাট শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাসুদ রানা। বলেছেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের কিছু উদ্যোগ নিলেও অর্থনৈতিক বৈষম্য বিলোপের কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না; আইনের শাসনের বদলে ‘মব’ তৈরি করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুবার্ষিকী ও জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে রংপুর জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়; সেখানে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
মাসুদ রানা বলেন,‘জুলাই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হচ্ছে না। আহত, নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে আছে। জনগণের সম্পদ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। পূর্বের ন্যায় সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর স্বার্থে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
বাসদের এই সমন্বয়ক বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের দাবি বারবার উচ্চকিত করা দরকার। জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের শিখিয়েছে জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে সকল স্বৈরশাসক হার মানতে বাধ্য। ঐক্যবদ্ধ জনগণ ন্যায্য দাবিতে লড়লে জয় অবশ্যম্ভাবী। এক্ষেত্রে আবু সাঈদসহ সকল শহীদরা আমাদের প্রেরণা। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ নির্মাণের সংগ্রামে ২৪, ৯০, ৭১, ৬৯, ৫২ সহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদরা আমাদের প্রেরণা।’
মাসুদ রানা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরের দুঃশাসনে মানুষের ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের অধিকারসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। দুর্নীতি-লুটপাট, গুম-খুন, বিচারহীনতা আর তীব্র অর্থনৈতিক শোষণ-বৈষম্যের মাধ্যমে কায়েম করেছিল এক ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট শাসন। এই তীব্র নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে। তাই গণঅভ্যুত্থানে দাবি উঠেছিল বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের।’
মাসুদ রানা আরও বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যূত্থানে স্ফুলিঙ্গ ছিলেন অসীম সাহসী বীর শহীদ আবু সাঈদ। পুলিশের গুলির সামনে দাঁড়ানো তার সাহসী লড়াই মূহুর্তে গোটা দেশে দাবানল সৃষ্টি করে। শহীদ আবু সাঈদের পথ ধরে শত শত ছাত্র-ছাত্রী, শ্রমিক, সাধারণ জনতা আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের গুলির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবন উৎসর্গ করেছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে, চোখ হারিয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। ২৪ এর জুলাইয়ে এভাবেই এদেশের ছাত্র-জনতা জীবন বাজি রেখে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনের পতনের জন্য আন্দোলনে নেমেছিল।’
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য সীমা দত্ত, রংপুর জেলা আহবায়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু, গাইবান্ধা জেলা সমন্বয়ক আহসানুল হাবীব সাঈদ, আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান রোকন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট রংপুর জেলা আহবায়ক সাজু বাসফোর বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য আহসানুল আরেফিন তিতু।
এর আগে, সকাল ১১ টায় আলোচনা সভার প্রারম্ভে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরাম ও বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আলোকচিত্র প্রদর্শনী করা হয়। আলোচনা সভা শেষে শহীদ স্মরণে একটি র্যালী নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।