নিজস্ব প্রতিবেদক
গোপালগঞ্জের ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষ শঙ্কিত নয়, উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, হাজার-হাজার ছাত্র-জনতার জীবন ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বলতা ও সিদ্ধান্তহীনতায় মনে হয় সরকারের সঙ্গে গোপন কোনো শক্তি কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ও উত্তরের যৌথ আয়োজনে ‘গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল’ পূর্বক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তাহের বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তিনি খুবই অসহায়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, ‘প্রশাসনের কোনো দুর্বলতা থাকলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
ডা. তাহের বলেন, আমাদের মনে হয়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই দুর্বল ও অসহায়। যার বাস্তবতা রাষ্ট্রের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ফুটে উঠেছে। মিটফোর্ডের ঘটনা থেকেই গোপালগঞ্জের ঘটনার সাহস দেখিয়েছে পতিত আওয়ামী লীগের দোসররা। আমরা অনতিবিলম্বে ‘মিস্টার অসহায়’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রত্যাহার করতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় জড়িত নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতার কারণে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ১৯ জুলাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ হতে যাচ্ছে- ঠিক এই মুহূর্তে এনসিপির পদযাত্রায় গোপালগঞ্জের হামলা একটি অশনি সংকেত।
তিনি বলেন, যেখানে এনসিপি সমাবেশ করার আগে প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। সেখানে প্রশাসন কি ভূমিকা রেখেছে?- গণমাধ্যমে দেখা গেছে যখন সমাবেশের মঞ্চ ভাংচুর করা হয়, তখন সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য উপস্থিত ছিল না।
প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, জাতি কি এখনো ফ্যাসিবাদের জামানায় রয়েছে কিনা? কারণ ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী দলমতের লোকদের কোন সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হতো না। সেই একই কায়দায় এনসিপির সমাবেশ পণ্ড করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।
তিনি আরও বলেন, জাতি আজ দুইদিকে দুই ভাগ হয়ে গেছে। একদিকে গণতন্ত্রকামী, শান্তিকামী, দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা, অপরদিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের সঙ্গি চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি, ধর্ষক, নৈরাজ্যকারী গোষ্ঠী। জনগণ এদের প্রতিহত করবেই, করবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের জনগণের জান ও মালের নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। গোপালগঞ্জের সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা এটিএম মাছুম বলেন, গোপালগঞ্জে সংঘটিত ন্যক্কারজনক ঘটনা মেনে নেওয়া যায়। এই ঘটনায় জড়িত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি প্রশাসনে থাকা আওয়ামী দোসরদেরও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে বাংলাদেশে আর কোনদিন স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারবে। যারা সন্ত্রাসীদের লালন-পালন করছে তারাও জাতির সামনে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। ৫ আগস্ট যেই ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে সেই ঐক্যে ফাটল দেখা যাচ্ছে। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের জাতীয় স্বার্থে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান।
জুলাই বিপ্লবে হাজার-হাজার মানুষ জীবন দিয়ে বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার পরও সমাবেশে হামলা করার সাহস কারা কিভাবে পায় প্রশ্ন রেখে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সরকারের ভেতরে ফ্যাসিবাদের দোসররা থাকায় ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। প্রশাসন থেকে যত দ্রুত ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করা হবে, তত দ্রুত দেশের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আসবে, সরকারের ভাবমর্যাদা, গ্রহণযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা দেশে-বিদেশে বৃদ্ধি পাবে। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে সরকারের আইন প্রয়োগ কঠোর হতে তিনি আহ্বান জানান।
সহকারী সেক্রেটারি সাবেক এমপি ড. এইচএম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর তার দোসররা কীভাবে বিপ্লবীদের ওপর হামলা করার সাহস পায়? সেখানে প্রশাসন কি দায়িত্ব পালন করেছে? এই হামলা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হেনেছে। যারা হামলা চালিয়েছে তাদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
গোপালগঞ্জের ঘটনায় সরকারের দুর্বলতা প্রমাণিত হয়েছে। সরকারের সক্ষমতা প্রমাণে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রশাসনের ভেতরের এবং বাহিরের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা বাংলাদেশের জনগণ লংমার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় প্রচার সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম প্রমুখ।
এছাড়াও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন, ড. আব্দুল মান্নান, মো. শামছুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর দায়িত্বশীল নেতারা।
সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের নেতৃত্বে এক বিশাল প্রতিবাদ মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইট থেকে শুরু হয়ে প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন, শাহবাগ চত্বরে গিয়ে মিছিল শেষ হয়।