বর্তমান সময় ডেস্কঃ
ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকার এক মাস পেরিয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। এখনো তা বন্ধ। শুধু কেন্দ্রীয় নয়, দলটির জেলা কার্যালয়গুলোর বেশির ভাগ তালাবদ্ধ। সেগুলো কবে খোলা যাবে, কবে নেতা-কর্মীরা আবার আগের মতো আনাগোনা শুরু করবেন, তা কেউ জানেন না।
দেশের ৬৪টি জেলায় গত দুই দিনে বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে, খোঁজ নিয়ে এবং দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দলটির ৫৬টি জেলা কার্যালয়ই বন্ধ। চারটি জেলায় দলের কার্যালয় নেই। খোলা আছে চারটি।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, কার্যালয় ঘিরে পুলিশের পাহারা, টহল অথবা গোয়েন্দাদের তৎপরতা থাকে। গেলেই গ্রেপ্তারের ভয় আছে। নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে। ফলে কার্যালয় খোলা হয় না।
৬৪ জেলাসহ বিএনপির সাংগঠনিক জেলা মোট ৮২টি। বিভাগীয় শহরগুলোর মহানগর কার্যালয় যেমন আছে, তেমনি রয়েছে জেলা কার্যালয়। কোথাও কোথাও বড় জেলা সাংগঠনিকভাবে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত। ৮০টি সাংগঠনিক জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭২টির কার্যালয়ই বন্ধ (কোথাও কোথাও জেলা ও মহানগর কার্যালয় একই ভবনে অথবা একই কার্যালয়ের ভেতরে)। চারটিতে দলের কার্যালয় নেই, চারটিতে খোলা (আগে উল্লেখ করা জেলা কার্যালয়)।
যে চার জেলায় বিএনপির কার্যালয় খোলা পাওয়া গেছে তা হলো ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর। তবে এসব কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের আনাগোনা খুবই কম। জেলা পর্যায়ের নেতারা বলছেন, গ্রেপ্তারের ভয়ে তাঁরা সেখানে যান না।
কার্যালয়গুলোর বেশির ভাগ বন্ধ রয়েছে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে, যেদিন ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশের অভিযানে পণ্ড হয়ে যায়। ওই দিন পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের এক সদস্যসহ দুজন নিহত হন। এরপর পুলিশ সারা দেশে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা এবং বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ২৮ অক্টোবরের ওই মহাসমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি।
পুলিশ ও আদালত সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে গত এক মাসে ৯ হাজার ৭০০ জনের বেশি বিএনপির নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই কারাগারে। বাকিরা আত্মগোপনে রয়েছেন। জেলা পর্যায়েও সক্রিয় নেতা-কর্মীদের অনেকে কারাগারে, বেশির ভাগ আত্মগোপনে। বিএনপির হিসাবে, গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১৭ হাজারের কিছু বেশি।
১৯৭৭ সালে জাগদলের (জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল) মাধ্যমে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বিরোধী নেতা-কর্মীদের ওপর এত মামলা ও অত্যাচার তিনি কখনো দেখেননি। এমনকি এরশাদের সামরিক শাসনের সময়ও নয়। তিনি বলেন, পুলিশ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে না পেলে স্বজনদের ধরে আনছে। বাড়িতে বাড়িতে হামলা করছে মুখোশধারী ও ‘হেলমেট’ বাহিনী।
সেলিমা রহমান আরও বলেন, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ভয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ে যেতে পারছেন না। তবে কাজ করছেন। এই অবস্থার অবশ্যই পরিবর্তন আসবে।
বিএসডি/আরপি