নিজস্ব প্রতিবেদক
ফুটবল বাদে অন্য (২০১৭ ও ২০২১ সালে ক্রিকেট বোর্ড নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করলেও, এনএসসি মন্ত্রণালয় কর্মকর্তার কমিশনে ছিলেন) সকল ফেডারেশনের নির্বাচন পরিচালনা করে ফেডারেশনগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। ফুটবল ফেডারেশন গঠনতন্ত্র অনুসারে নিজস্ব নির্বাচন কমিশন ও বিধিমালায় নির্বাচন পরিচালনা করে।
২০০৮ সালের গঠনতন্ত্রে বড়সড় পরিবর্তন আসে বাফুফের। জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে বেরিয়ে জেলা-বিভাগীয় ফুটবল এসোসিয়েশনের অধীভুক্ত, সভাপতি শাসিত ফেডারেশন ও পেশাদার সাধারণ সম্পাদক এসব কিছুই অনুমোদিত হয়েছে ২০০৮ সালের গঠনতন্ত্রে। সেই গঠনতন্ত্রে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় একেবারে স্বল্প আকারে লিপিবদ্ধ।
গঠনতন্ত্রে নির্বাচন সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ২৫ (ইংরেজিতে) মাত্র চার লাইনের। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, নির্বাচন কমিশন বা কমিটি দ্বারা নির্বাচন পরিচালিত হবে, সেটা কিছু টার্মের মাধ্যমে তা নির্ধারিত করবে বাফুফে। গোপন ব্যালটে ভোট হবে এবং সর্বোচ্চ ভোটধারীরা বিজয়ী হবেন। কোনো পদে টাই (সমান ভোট) হলে সভাপতি সেই পদে কাস্টিং ভোট দিতে পারবেন।
এই বাইরে নির্বাচন সংক্রান্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে অনুচ্ছেদ-৩২ নির্বাহী কমিটির অংশে। সেখানে রয়েছে নির্বাচনের সময় বয়স ২৫ এর কম নয় এবং ৭২–এর বেশি হওয়া যাবে না। ফুটবলে সক্রিয় থাকতে হবে এবং আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া যাবে না। ফুটবলে সক্রিয়তা এবং আদালতের সাজাপ্রাপ্তের মাঝে ‘এন্ড’ যুক্ত করে বলা হয়েছে– ‘এন্ড হ্যাভ রেসিডেন্সি আউট অফ টেরিটরি অফ বাংলাদেশ।’ এই অংশটুকু নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন বাফুফের গঠনতন্ত্রে রেসিডেন্সি অংশের ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে, ‘বাংলাদেশের বাইরে কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব কিংবা স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি থাকতে পারবে না।’ ২০০৮ সাল থেকে বাফুফের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন। তিনি গঠনতন্ত্রের রেসিডেন্সি অংশ নিয়ে বলেন, ‘বাফুফে গঠনতন্ত্রমতে বাংলাদেশের বাইরে নিবাসী ব্যক্তি নির্বাচনের অযোগ্য। এই ক্যাটাগরিতে যাদের বিদেশি পিআর বা নাগরিকত্ব আছে, তারা নির্বাচনের অযোগ্য হবেন কি না তা নিয়ে কখনও প্রশ্ন দেখা দেয়নি। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হলে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক খতিয়ে দেখার অবকাশ তৈরি হতো।’
সিলেট জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি ও বাফুফে নির্বাহী সদস্য মাহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম। কাতারে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে তার। বাফুফের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান সভাপতি প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে দ্বৈত নাগরিক হিসেবে জানে ফুটবলাঙ্গনের অনেকে। বাফুফের বর্তমান সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদেরও দেশের বাইরে বসবাস যোগ্যতা রয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। বর্তমান ও বিগত বাফুফে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের বাইরে বসবাস যোগ্যতা রয়েছে।
বাফুফের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের কাছে গঠনতন্ত্রের এই অংশের ব্যাখ্যা একটু ভিন্ন, ‘বেশ বড় একটি লাইনে কয়েকটি বিষয় সংযুক্ত হয়েছে। ফুটবল সক্রিয়তা, আইনী সাজা ও রেসিডেন্সি। এখানে মূলত বাংলাদেশ ফুটবলের সঙ্গে সক্রিয়তা এবং বাংলাদেশে বসবাস করছে তারাই বাফুফে নির্বাহী কমিটির নির্বাচনের জন্য যোগ্য।’
১৬ বছর আগে এই গঠনতন্ত্র প্রণয়ন হয়েছে। সেই সময় যারা জড়িত এমন কয়েকজন সংগঠকের এই অংশ নিয়ে পর্যবেক্ষণ, ‘বাংলাদেশ ফুটবলের সঙ্গে সক্রিয় এবং প্রবাস জীবন কন্ডাক্টটরি। ফলে এই অংশে মূলত বোঝানো হয়েছে– বিদেশি কোনো নাগরিক কিংবা প্রবাসী বাংলাদেশি যারা দেশের ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত নন, তারা নির্বাচন করতে পারবেন না।’
বাফুফের নির্বাচন মনোনয়নপত্রে সুনির্দিষ্ট ছক রয়েছে বাংলাদেশে স্থায়ী নিবাস নিয়ে। সেখানে প্রার্থীদের হ্যাঁ/না টিক চিহ্ন দিতে হয়। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘স্থায়ীভাবে একজন ব্যক্তি একটি দেশেই বসবাস করে। এজন্য আমরা মনোনয়নে বাংলাদেশে বসবাস করে কি না এই অংশটুকু রেখেছি।’
বাফুফে নির্বাচনে অনেক সামর্থ্যবান ও সামাজিক ব্যক্তি প্রার্থী হন যারা দেশে ও বিদেশে উভয় জায়গায় স্থায়ী বাসের যোগ্য। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে অনেক দেশেই স্থায়ী বসবাসের সুযোগ ও দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রদান করছে। তাই বাফুফের গঠনতন্ত্রের জন্য মূলত ফিফা-এএফসি’র শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল। এটার আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বাফুফেকে ফিফা-এএফসি’র সঙ্গে যোগাযোগ করে দিতে হবে।’
ফুটবল বিশ্বে অবশ্য দ্বৈত নাগরিক খুবই সহজ বিষয়। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ারই স্বদেশের পাশাপাশি ডেনমার্কেরও পাসপোর্ট রয়েছে। নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার তারিক কাজীর রয়েছে ফিনল্যান্ডের। ইংল্যান্ডের পাসপোর্ট থাকা হামজা চৌধুরি এখন বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী। ফিফার অনুমতি পেলে তিনিও খেলবেন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে। ফিফার বর্তমান সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোও দ্বৈত নাগরিক।