আন্তর্জাতিক ডেস্ক,
আফগানিস্তান থেকে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে সব বিদেশী সেনা ও নাগরিকদের বের হয়ে যেতে বলেছে তালেবান। এর পর তারা আর সময় বাড়াবে না বলে জানিয়েছে। ৩১ আগস্টের পর বিদেশী সেনারা আফগানিস্তানের মাটিতে অবস্থান করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে তালেবান। কোনো কোনো মহল থেকে সময় বাড়ানোর আবেদন জানালো হলেও তাতে রাজি হয়নি তারা।
এমন পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাবুল ছাড়ার জন্য পশ্চিমা নাগরিকদের মধ্যে রীতিমতো হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব বিদেশী আফগানিস্তান ত্যাগ করতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে অনেকে। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সরতে পারি ততই মঙ্গল।
অপরদিকে, তালেবানের সঙ্গে প্রথম কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন করেছে চীন। এমনকি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের টেলিফোনে আফগানিস্তান বিষয় নিয়ে আলাপও হয়েছে। অন্যদিকে, তালেবানের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে জার্মানিও। জার্মান চ্যাঞ্চেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল বলেছেন, তার দেশ তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
ব্রিটেন এবং ফ্রান্স বলছে, চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই তারা আফগানিস্তান থেকে তাদের সব নাগরিক এবং তাদের সহযোগী আফগানদের সরিয়ে নিতে সমর্থ হবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন কাবুল বিমানবন্দর থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের সময়সীমা বাড়াতে অস্বীকৃতি জানানোর পর এই দুটি দেশ একথা ঘোষণা করলো। ফ্রান্সের ইউরোপ বিষয়ক মন্ত্রী ক্লেমেন্ত বোন বলছেন, আফগানিস্তানে সে দেশের উদ্ধার অভিযান বৃহস্পতিবারের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলছেন, দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই এমন ব্রিটিশ নাগরিকদের বেশিরভাগকেই ইতিমধ্যে আফগানিস্তান থেকে বের করে আনা হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে- রাশিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন, কিরঘিজস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের পাঁচশোরও বেশি নাগরিকদের কাবুল থেকে বের করে আনার জন্য তারা চারটি বৃহদায়তন সামরিক বিমান পাঠিয়েছে।
কাবুল বিমানবন্দরের গেটের বাইরে দেশত্যাগে মরিয়া লোকজনদের ভিড় লেগে আছে। সবার মধ্যে হুড়োহুড়ি কাবুল ছাড়ার জন্য। এয়ারপোর্টের গেট পর্যন্ত পৌছাঁতে মানুষজনকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। কাবুল বিমানবন্দর থেকে প্রতি ঘণ্টাতেই যাত্রী-বোঝাই উদ্ধারকারী বিমানের ফ্লাইট আকাশে ডানা মেলছে। হুড়োহুড়ির কারণে আশঙ্কা হচ্ছে, যাদের রওনা হওয়ার কথা ছিল, তাদের কাউকে কাউকে বাদ দিয়েই ফ্লাইটগুলোকে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে হতে পারে।
যত দ্রুত তত মঙ্গল: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে যত বেশি সময় থাকবে, ততই আমাদের ওপর আইএসের হামলার প্রবণতা বাড়বে। যত দ্রুত আমরা কাবুল ছাড়তে পারবো, ততই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলজনক।’ স্থানীয় সময় সকালে বাইডেন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। বিবিসি একথা জানিয়েছে। বাইডেন বলেন, ‘তালেবান আমাদের লোকদের কাবুল থেকে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদেরকে মূল্যায়ন করবে। আমরা তাদের মুখে বলা কথা গ্রহণ করব না।
কাবুলে চীন, তালেবান প্রথম সংলাপ: তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর চীন কাবুলে তালেবানের সঙ্গে প্রথম কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন করেছে এবং দুই পক্ষের মধ্যে এখন ‘নিরবচ্ছিন্ন এবং কার্যকর যোগাযোগ’ ও স্থাপন হয়েছে। চীন বুধবার একথা জানিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের উপ-প্রধান আবদুল সালাম হানাফি এবং আফগানিস্তানে চীনের রাষ্ট্রদূত ওয়াং ইউ -এর মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, কাবুল স্বাভাবিকভাবেই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম এবং চ্যানেল। চীন আফগান জনগণের নিজস্ব ভবিষ্যৎ এবং ভাগ্যের বিষয়ে তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্তকে সম্মান করে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অপরদিকে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আফগানিস্তান নিয়ে টেলিফোনে আলোচনা করেছেন। চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা পিপলস ডেইলি জানিয়েছে, দুই নেতা আফগানিস্তান সম্পর্কে মতবিনিময় করেছেন। তারা আফগানিস্তানে একটি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার, মধ্যপন্থী, স্থিতিশীল সরকারের নীতি বাস্তবায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
মানবিক সংকটের মুখে আফগানিস্তান: এদিকে, নতুন তালেবান শাসনের অধীনে আফগানিস্তান একটি মানবিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে, উন্নয়ন সহযোগীরা এমন এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে। এর মধ্যেই ন্যাটোর একজন কূটনীতিক বলেছেন, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর উচিত তাদের স্থলসীমা খুলে দেওয়া, যাতে আরও বেশি মানুষ দেশ ছাড়তে পারে। বুধবার কাবুলভিত্তিক ওই কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, ‘ইরান, পাকিস্তান ও তাজিকিস্তানের উচিত আকাশ বা স্থল পথে আরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া।’
বিএসডি/এএ