নিজস্ব প্রতিবেদক,
নওগাঁ সদর উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য নজরুল ইসলামের (৭৪) বিরুদ্ধে নিজের কৃষক বাবা-মায়ের নাম পরিবর্তন করে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি শিক্ষা ও কর্মজীবনের সকল কাগজপত্রে চাচাকে বাবা ও চাচিকে মা বানিয়ে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুধুমাত্র নিজের প্রয়োজনে তিনি বাবাকে বাবা আবার কখনো চাচাকে বাবা বানিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছেন। তার মুক্তিযোদ্ধা হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে জানা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মোক্তারপাড়া গ্রামের মৃত মনির উদ্দীনের ছেলে নজরুল ইসলাম। তার মায়ের নাম করপুল বিবি। মনির উদ্দীন পেশায় ছিলেন একজন কৃষক। মনির উদ্দীনের ছোট ভাইয়ের নাম ইয়াকুব হোসেন। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি করতেন। বিয়ের প্রথম দিকে তার কোনো সন্তান না থাকায় নজরুল ইসলাম তার চাচা ইয়াকুবের কাছেই বড় হতে থাকেন। এরই মধ্যে ইয়াকুব হোসেনের ঘরে জন্ম নেয় আব্দুল হামিদ ও আব্দুল হালিম নামে দুই সন্তান।
নজরুল ইসলাম তার শিক্ষাজীবনের এসএসসিতে বাবার নামের জায়গায় চাচার নাম ইয়াকুব হোসেন এবং মায়ের নামের জায়গায় চাচি হামিদা খাতুনের নাম লিখে দেন। সেই থেকে তার শিক্ষা ও কর্মজীবনের সকল কাগজপত্রে বাবার নামের জায়গায় চাচাকে বাবা ও চাচিকে মা বানিয়ে রাখা হয়েছে। সেই সুবাদে নজরুল ইসলাম একজন সরকারি চাকরিজীবীর ছেলে হিসেবে বেড়ে উঠেন। একসময় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি চাকরি থেকে অবসরে এসেছেন।
নজরুল ইসলাম বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১২/০১/১৯৪৭ জন্ম তারিখ দিয়ে ১৬/৯/২০১৩ ইং তারিখে ইস্যুকৃত ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা জুয়েল স্বাক্ষরিত একটি জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র গ্রহণ করেন। যেখানে তার আসল বাবা মৃত মনির উদ্দীন এবং মা করপুল বেওয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আবার একই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩০/১০/১৯৪৭ জন্ম তারিখ দিয়ে ১৯/১১/২০১৩ ইং তারিখে ইস্যুকৃত একই চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত একটি জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র গ্রহণ করেন। যেখানে তার বাবা ইয়াকুব হোসেন এবং মা হামিদা খাতুনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা জুয়েল এ দুটি জন্ম নিবন্ধন বাতিল করে ১/৪/১৫ ইং তারিখে প্রত্যয়নপত্র দেন।
এরপর গত ৯/৩/২০২১ ইং তারিখে নজরুল ইসলামের বাবা মৃত মনির উদ্দীন এবং মা মৃত করপুল উল্লেখ করে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম প্রত্যয়নপত্র দেন। যেখানে বলা হয়েছে, ‘নজরুল ইসলাম তার চাচা মৃত ইয়াকুব হোসেনকে পিতা ও চাচি মৃত হামিদা খাতুনকে মাতা মর্মে যে সমস্ত কাগজপত্র ব্যবহার করছেন সেগুলো সম্পূর্ণ ভূয়া এবং অবৈধ।’
স্থানীয় মোক্তারপাড়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক আতাউর রহমান, নজরুল ইসলাম ও সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, ‘নজরুল ইসলামকে তার চাচা পালকছেলে হিসেবে বড় করেছেন। এখন তার সকল কাগজপত্রে চাচাকে বাবা হিসেবে নাম রয়েছে। তিনি ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্থানে সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৬ মাস পর তিনি দেশে আসেন। তাহলে তিনি কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হন? অথচ তিনি মুক্তিযোদ্ধার সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।’
তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘নজরুল ইসলাম এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন। যখন যেখানে যে বাবার নামে সুবিধা নেওয়া দরকার সেখানে সেই বাবার নাম দিয়ে চেষ্টা করেন। এর একটা সমাধান হওয়া দরকার বলে মনে করছেন তারা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ১৯৯৩ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকার থেকে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছি। আমার সকল কাগজপত্রে পিতা হিসেবে ইয়াকুব হোসেন (চাচা) এর নাম আছে। আর যে দুটো জন্ম নিবন্ধন ছিল ইউপি চেয়ারম্যান প্রত্যয়নপত্র দিয়ে তা বাতিল করেছেন। প্রকৃতপক্ষে মনির উদ্দীন বাবা হলেও কাগজপত্রে বাবার জায়গায় চাচার নাম রয়েছে।
মৃত ইয়াকুব হোসেনের ছোট ছেলে আব্দুল হালিম বলেন, নজরুল ইসলাম আমার বড় আব্বুর ছেলে (বাবার বড় ভাই)। আমরা জন্মের আগে বাবা তাকে কাছে রেখে মানুষ করেছেন। তার ম্যাট্রিকের সময় বাবার নামের জায়গায় আমার বাবার নাম ও মায়ের নাম লিখে দেয়। তখন থেকেই তার কাগজপত্রে আমার বাবা-মার নাম রয়েছে।
বিএসডি/এমএম