রাকিবুল ইসলাম
ইতিহাসের পরতে পরতে ‘গতি’ বদলে দিয়েছে সভ্যতার চাকা। পালের নৌকা থেকে স্টিম ইঞ্জিন এনেছে পশ্চিমা রেনেসাঁ ও বৈশ্বিক কর্তৃত্ব। রেল সংযোগ বাড়িয়েছিল জীবনের গতি। আর আধুনিক নগরজীবনে মেট্রোরেল সৃষ্টি করেছে গতির নতুন যুগ। খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। যার ফলে আলোকিত বাংলাদেশ।
১৮৬৩ সালে বিশ্বের প্রথম মেট্রোরেল লন্ডন আন্ডারগ্রাউন্ড চালু হওয়ার প্রায় ১২০ বছর পর উপমহাদেশে প্রথম ভারতের কলকাতায় শুরু হয় আধুনিক নগর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা এ যোগাযোগ ব্যবস্থা। তারপর দিল্লি, হায়দরাবাদ, ব্যাঙ্গালুরু ও চেন্নাইয়েও পরে মেট্রোরেল সার্ভিস চালু হয়। পাকিস্তানের লাহরেও আছে মেট্রোরেল। এবার দক্ষিণ এশিয়ার মেট্রোরেলের ইতিহাসে সর্বশেষ নাম লেখিয়েছে বাংলাদেশ।
আধুনিক নগরজীবনে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে মেট্রোরেল। কিন্তু গত ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশে মেট্রোরেল উদ্ভোধনের পর জনবসতীপূর্ণ ঢাকাবাসীর এক আস্থার বাহন হয়ে উঠতে শুরু করেছে এটি। অফিসগামীদেরও প্রিয় বাহন হয়ে উঠছে মেট্রোরেল। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ অফিসে যাওয়া-আসা করছেন এই মেট্রোতে করেই। তাইতো স্বস্তির বাহন হয়ে উঠতে শুরু করেছে মেট্রেরেল।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুসজ্জিত স্টেশন, সারিবদ্ধ লাইন সাথে মনোরম পরিবেশ – এসব দেখলে মনে হবে রূপকথার জগৎ কিংবা কোনো উন্নত দেশে আছি। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে রাজধানীর বুকেই চোখে পড়বে এমন দৃশ্য। উত্তরার তিনটি স্টেশন থেকে ১০ মিনিট পরপর মেট্রোরেল ছাড়লেও প্রতিটিতেই যাত্রী বোঝাই। এসব স্টেশন থেকে যাত্রীবোঝাই করেই পল্লবী স্টেশনে আসছে মেট্রো। পল্লবীতে অল্পকিছু যাত্রী নামলেও উঠছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। বেশিরভাগ যাত্রীর গন্তব্য মতিঝিল, সচিবালয়, ফার্মগেট ও আগারগাঁও। তবে যেসব যাত্রীর মেট্রোপাস নেই তাদের কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিতে হচ্ছে তাদের।
৬৫ বছর বয়সের বৃদ্ধ আফজাল হোসেন শেওড়াপাড়া থেকে মতিঝিলে যাওয়ার জন্য মেট্রোরেলে চড়েন। তাঁকে পুরো পথই দাঁড়িয়ে যেতে হয়। তিনি বলেন, ‘কষ্ট হবে কেন বাবা। এটা তো স্বস্তির বাহন। অনেকেই আমাকে বসতে বলেছে। কিন্তু আমি বসিনি। দাঁড়িয়ে ঢাকার দৃশ্যগুলো দেখলাম। খুব ভালো লাগল।’
অপু নামের একজন যাত্রী জানান, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত একটি বাসে যেতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা এবং ভিড়ের জন্য সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। কিন্তু মেট্রোরেলে সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। মিরপুর কিংবা উত্তরার দিকে যেতে প্রতিবারই ট্রাফিক সিগন্যাল আর যানজটের কারণে নাকাল হতে হয় নগরবাসীর। এখন মেট্রোরেলে অল্প সময়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়া সম্ভব।
মেট্রোরেল ব্যবহারে একদিকে যেমন কমেছে যাতায়াতের দূরত্ব, সময় এবং খরচ তেমনি জনজীবনে ফিরছে স্বস্তি। অপরদিকে বায়ু দূষণে বিশ্বে ৫ম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সেখানে দূষণ রোধ, জ্বালানি সাশ্রয়ের মত বহু কার্যকরী দিক রয়েছে এই মেট্রোরেলে। এককথায় মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে নগরবাসী।
তবে সবাই যে এর সুবিধা পাচ্ছে বিষয়টি এমনও নয়। এখনো কিছু কিছু জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি এই মেট্রোরেল সেবাটি। মেট্রোরেল পুরোদমে চালু হলে বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর ঢাকার মানুষ তীব্র যানজট থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। একইসাথে আস্থার বাহন হবে এটি।
একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত একটি বাসে যেতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা এবং ভিড়ের জন্য সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। কিন্তু মেট্রোরেলে সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। মিরপুর কিংবা উত্তরার দিকে যেতে প্রতিবারই ট্রাফিক সিগন্যাল আর যানজটের কারণে নাকাল হতে হয় নগরবাসীর। এখন মেট্রোরেলে অল্প সময়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়া সম্ভব।
শান্তা নামের এক শিক্ষার্থী জানান, আমি প্রতিদিন যাত্রাবাড়ী থেকে নতুন বাজারে আসি ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে। এতো দূর থেকে এসে ক্লাস করতে সময় লাগে অনেক। আবার জ্যাম তো আছেই। এই রুটে মেট্রোরেল ব্যবস্থা চালু হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। পাশাপাশি সময়ও কম লাগবে আমাদের।
তাসফিয়া তাসনীম নামের এক পথচারী জানান, সব জায়গায় এই মেট্রোরেল হলে ভবিষ্যতে দেশ হবে উন্নত। পাশাপাশি কমবে জানজট। সবাই তখন স্বাচ্ছ্যন্দে চলাচল করতে পারবে।
জানা যায়, ঢাকায় এমআরটি লাইন ৬ এর পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে আরো পাঁচটি মেট্রোরেল তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এমআরটি লাইন – ১ এর রুট বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এবং বাংলাদেশের প্রথম পাতাল রেল হওয়ার কথা এটির।
এর পাশাপাশি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গুলশানের ভাটারা পর্যন্ত উড়াল ও পাতাল মিলিয়ে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এমআরটি লাইন-৫: নর্দার্ন রুটের নকশার শেষ পর্যায়ের কাজ চলমান রয়েছে।
এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে আফতাবনগর পর্যন্ত, গাবতলী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ও কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত আরো তিনটি মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ চলছে।
বিএসডি/আরপি