স্টাফ রিপোর্টার
পশ্চিম আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ নাইজেরিয়ার একটি গ্রামীণ মাছবাজারে যুদ্ধবিমান থেকে বৃষ্টির মতো বোমাবর্ষণ করেছে দেশটির বিমান বাহিনী। ভয়াবহ সেই আক্রমণে নারী-শিশুসহ অন্তত ৬২ জন বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, গেল রবিবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় দাবান মাসারা গ্রামের ওই মাছবাজারে বিমান বাহিনীর দুইটি যুদ্ধবিমান থেকে বোমাবর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
হামলার শিকার হুসাইনি নামে এক ব্যক্তি রয়টার্সকে বলেছেন, তাৎক্ষনিকভাবে অন্তত ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আমার একজন বন্ধুও রয়েছেন। মাত্র তিন মাস আগেই তার বিয়ে হয়েছিল।
হুসাইনি জানিয়েছেন, এবারের হামলায় তিনি নিজেও আহত হয়েছেন। গোলার আঘাতে তার পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি নিউজ জানায়, দাবান মাসারা গ্রামের মানুষদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মৎস্যজীবী। গ্রামের নিকটবর্তী শাদ হ্রদে মাছ ধরাই তাদের প্রধান জীবিকা।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, হ্রদ ও তার আশপাশের এলাকা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক টেস্ট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভি (আইএসডব্লিউএপি)। তারা অর্থের বিনিময়ে ওই হ্রদ থেকে স্থানীয়দের মাছ ধরার অনুমতি দিয়েছিল।
আইএসডব্লিউএফপিরের অর্থ সংগ্রহ বন্ধ করতে ওই হ্রদে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটির সামরিক বাহিনী, যারা গত ১২ বছর যাবত নাইজেরিয়ার জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে।
যদিও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্থানীয়রা সেখানে মাছ ধরে আসছিলেন বলে জানিয়েছেন দাবান মাসারা গ্রামের এক বাসিন্দা।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, হামলায় যারা নিহত হয়েছেন, তারা একেবারেই সাধারণ মানুষ। ঘটনাটি পুরোপুরি ভুল সিদ্ধান্তের ফল। নিরাপত্তা বাহিনীর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থানীয়রা হ্রদে মাছ শিকার করতে গিয়েছিলেন।
জাতিসংঘের এক নিরাপত্তা প্রতিবেদনেও রবিবার নাইজেরিয়ার বাহিনীর সাম্প্রতিক আক্রমণ চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সেই প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখেছে রয়টার্স। সেখানে বলা হয়, বিমান বাহিনীর হামলায় এক জেলে নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, নাইজেরিয়ায় সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে নাইজেরিয়ার সরকারের কাছে ৬টি এ-২৯ সুপার টুকানো যুদ্ধ বিমান বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও অতীতেও দেশটির সামরিক বাহিনীর হাতে নিরীহ সাধারণ মানুষ নিহতের রেকর্ড থাকায় এই বিমান বিক্রয়ের নিন্দা জানিয়েছিলেন সমালোচকরা।
কিন্তু সাম্প্রতিক এই হামলা ও বেসামরিক নিহতের ঘটনা নাইজেরিয়াকে প্রপেলার চালিত হালকা আরও ৬টি এ-২৯ সুপার টুকানো যুদ্ধবিমান সরবরাহে প্রভাব ফেলবে কি-না, তাৎক্ষণিকভাবে তা স্পষ্ট করা হয়নি।
উল্লেখ্য, নাইজেরিয়ার বিমান বাহিনীর বোমায় একটি শরণার্থী শিবিরের ১৭০ জন নিহতের পর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন দেশটিতে যুদ্ধবিমান সরবরাহের চুক্তি স্থগিত করেছিল। পরবর্তীকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করেন। যার অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে নাইজেরিয়ার কাছে যুদ্ধবিমান বিক্রিতে রাজি হয় যুক্তরাষ্ট্র।
বিএসডি/এমএম