অন্তু আহমেদঃ ‘দি ব্রেভ গার্লস’ গত ২৫ নভেম্বর থেকে জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা রোধের উদ্দেশ্যে “সিক্সটিন ডেইস অ্যাক্টিভিজম: লেটস স্পিক আপ” ক্যাম্পিং করে আসছে। ক্যাম্পেইনের একটি কর্মসূচি বিষয় ভিত্তিক আলোচনা সভা। এছাড়াও ক্যাম্পিনং এর কর্মসূচিতে থাকছে; স্টোরি টেলিং সেশন, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, বিশেষ আলোচনা সিরিজ। গত মঙ্গলবার (০১ডিসেম্বর) রাত নয়টায় বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সভা চতুর্থ পর্ব স্ট্রিম ইয়ার্ড ভিডিও কনফারেন্স প্লাটফর্মের মাধ্যমে ফেসবুকে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের বিষয়বস্তু ছিল ‘আমাদের পেছনে ফেলে নয়’। আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রেসিডেন্ট’সস্কাউট ২০১৯ সাবিকুন মুবাসসিরা জামান এবং প্রেসিডেন্ট’স স্কাউট ২০১৮ ও এরাইজ হেল্প ফর চাইল্ড ফাউন্ডেশন এর অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি (মিডলজোন) তাহসিন মিতি। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা এবং উপস্থাপনা করেন রেনেকা আহমেদ অন্তু, ইয়ুথ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অফ দি ব্রেভ গার্লস।
শুরুতে অন্তু ‘আমাদের পেছনে ফেলে নয়’ নামকরনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, কোন সমাজের সফলতার জন্য আমাদের সবাইকে সমান তালে চলতে হবে। কাউকে পিছনে ফেলে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই সমাজে উন্নয়নের জন্য নারী ও শিশু সকলেরই অংশগ্রহনের প্রয়োজন। সমাজে কন্যাশিশুদেও অবহেলা কওে কখনোই জেন্ডার সমতা অর্জন সম্ভব নয়।
সাবিকুন মুবাসসিরা জামান বলেন, “নারীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় ছোটবেলা থেকেই তাদেও মেনস্ট্রুয়েশন সময়কার পরিষ্কার পরিছন্নতা রক্ষা করার সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। এই করোনাকালীন সময়ে ডিজিটাল প্লাটফর্ম এর ব্যবহার খুব বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সাইবার ক্রাইম কিংবা সাইবারবুলিং এর মত নানা ধরনের অপরাধ এই করোনাকালীন সময়ে প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সাথে সাথে নারীরা ব্ল্যাকমেইলিং এবং হ্যারাসমেন্ট এর শিকার হচ্ছেন। যার হার করোনা পূর্ববর্তী সময়ে অপেক্ষা অনেক বেশি। এখনই জেন্ডার সমতা স্থাপন করার ব্যাপারে জোর দিতে হবে। এর মাধ্যমেই আজকের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দেবার আহবান জানান।
তাহসিন মিতি বলেন, “নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূণ বিষয় হলো মেনস্ট্রুয়েশন সময়কালীন হেলথ। এই বিষয়ে প্রত্যেকটি নারী সর্বপ্রথম পরিবার থেকে শিক্ষা লাভ করেন। কিন্তু লজ্জা ও সংকোচবোধের কারণে অনেক নারী এই ব্যাপারে খোলাখুলি ভাবে আলোচনা করতে পারে না। নারীদের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারলে নারীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা হুমকির সম্মুখীন হবে। প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীর স্বাস্থ্যসুরক্ষা প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকতে হবে।” মুবাসসিরার কথার সাথে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, “ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে নারীরা প্রতিনিয়ত সাইবার বুলিং এবং হ্যারাসমেন্টের শিকার হচ্ছে যা করোনাকালীন সময় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। মেয়েদেও ছবিতে বাজে মন্তব্য করা, তাদেও পোশাক-আশাক কিংবা সাজসজ্জা নিয়ে বাজে মন্তব্য করা ইত্যাদি নানা ভাবে নারীদেরকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে হয়রানির শিকার হতে হয়। বর্তমানে কেউ কোনো ভালো কাজ করে তার সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করলেও তাকে নানা ধরনের সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে।
দক্ষিন এশিয়াতে নারীক্ষমতায়নে প্রথম হওয়া সত্ত্বেও আজো বাল্যবিবাহ ভয়াবহ। মুবাসসেরা বলেন, “বাল্যবিবাহ আমাদে নারীদের অগ্রগতি বাধা স্বরূপ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাল্যবিবাহের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাল্যবিবাহের দিক থেকে প্রথম সারিতে রয়েছে। আমাদের এই বাল্যবিবাহ রোধ করার ক্ষেত্রে আরো জোরালো ভাবে কাজ করে যেতে হবে। কন্যাশিশুদেও পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য পরিবার থেকেই সচেতনতা বাড়াতে হবে। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য তিনি ‘দি ব্রেভ গার্লস’ কে ধন্যবাদ জানান এবং এর ভবিষ্যৎ যাত্রা যেন আরও সফলতার দিকে এগিয়ে যায় সেই আশাব্যক্ত করেন।
মিতি বলেন, “আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে এখনো বাল্যবিবাহের হার অনেক বেশি। বাল্য বিবাহের দিক থেকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। জরিপ বলে বর্তমানে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার প্রায়৫২%এর বেশি । তাই এই বাল্যবিবাহের হার কমাতে মেয়েদের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির দিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষার মাধ্যমে তারা নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। মেয়েরা যে কেবল অন্যের ঘরের ঘরনী কিংবা বাবার বোঝা নয় বরং সমাজের অন্য নাগরিকদের মতোই কর্মক্ষম হতে পারে, সে ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সকল শ্রেনীর মানুষের একত্রে কাজ করতে হবে”।