ধর্ম ডেস্ক,
ন্যায়সঙ্গত কারণে তালাক ইসলামে বৈধ। তবে এটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট বৈধ কাজ। নারীরাও বৈধ উপায়ে এ তালাক নেয়ার অধিকার রাখে। নারীরা যথাযথ কারণে স্বামী থেকে আলাদা হওয়ার দুইটি বৈধ উপায় আছে।
দাম্পত্য জীবনে অশান্তির কারণেই স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর আলাদা হয়। তালাকের মাধ্যমে এ সম্পর্কের অবসান ঘটে। তবে নারীর বৈধ দুইটি কারণে স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিতে পারে। তবে তালাক ইসলামের সবচেয়ে নিকৃষ্ট বৈধ কাজ হিসেবে বিবেচিত। কারণ ছাড়া কোনো নারীর তালাক চাওয়া কি বৈধ? এ সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনাই বা কী? স্বামীর কাছে স্ত্রীর তালাক চাওয়াকে গোনাহের কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবী। হ্যাঁ যৌক্তিক কারণে স্ত্রীর তালাক চাওয়ার অধিকার আছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে-
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে নারী তার স্বামীর কাছে অকারণে তালাক কামনা করে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)
নারীর তালাকের অধিকার
ইসলাম নারীকেও তালাকের অধিকার দিয়েছে। বিয়ের সময় যে কোনো নারীই ইচ্ছা করলে স্বামীকে এ শর্ত দিতে পারবে যে- ‘আমি যদিও এখন স্বেচ্ছায় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি; কিন্তু পরে যে কোনো সময় কারণে-অকারণে এ সম্পর্ক ছিন্ন করার অধিকার আমাকে দিতে হবে। আর এ শর্তে বিয়ে সম্পন্ন হলে পৃথিবীর সব নারীই স্বামীর ইচ্ছার বাইরে তালাক গ্রহণ করে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের বলে দাও তোমরা যদি পার্থিব জীবন আর তার শোভাসৌন্দর্য কামনা কর, তাহলে এসো, তোমাদেরকে ভোগ-সামগ্রী দিয়ে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদেরকে বিদায় দেই।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২৮)
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে দুনিয়ার সুখ শান্তি বা পরকালীন সুখ শান্তি বেছে নেয়ার ইখতিয়ার (স্বাধীনতা) দিলে আমরা আল্লাহ ও তার রাসূলকেই গ্রহণ করলাম। আর এতে আমাদের প্রতি কিছুই অর্থাৎ তালাক (তালাক) সাব্যস্ত হয়নি।’ (বুখারি,মুসলিম)
তবে বিশেষ কিছু কারণে নারীরা তালাক চাইতে পারবে। যথাযথ কারণ থাকলে নারীর তালাক চাওয়া অবৈধ নয় বরং জায়েজ। আর যদি স্বামী নির্ধারিত কিছু ক্ষেত্রে নারীকে তালাক গ্রহণের অনুমতি দিয়ে দেয় তাতেও নারী তালাক চাওয়ায় অপরাধ নেই। তাহলো-
১. স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দিতে অক্ষম হলে।
২. স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ার কারণে স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে।
৩. স্ত্রী ছাড়া অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হয় তথা পরকীয়া, পাপাচারিতা কিংবা চারিত্রিক অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হলে।
৪. বৈধ যে কোনো কারণে স্বামীর প্রতি মনে প্রচণ্ড ঘৃণা সৃষ্টি হলে।
৫. স্বামী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বা কোথাও বন্দি থাকার ফলে স্ত্রী যদি নিরাপত্তাহীনতা কিংবা জীবনের বা যে কোনো ক্ষয়-ক্ষতির আশংকা করে।
৬. স্বামী দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে স্ত্রী যদি নিজের চারিত্রিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় কিংবা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়।
৭. ইসলামি শরিয়ত নির্দেশিত কারণ ছাড়া স্বামী যদি স্ত্রীকে শারীরিক আঘাত, অত্যাচার, অপমান কিংবা অভিশাপ ও গালাগালি দেয়।
৮. স্বামীর কোনো দুরারোগ্য বা সংক্রমক ব্যাধিতে স্ত্রীর আক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশংকা থাকলে।
৯. স্ত্রীকে যদি নির্বাসিত জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হতে বাধ্য করে। অথ্যাৎ স্ত্রীর বাবা-মা, ভাই-বোনসহ মাহরামদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতে বাধা দেয়।
১০. নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতসহ ইসলামের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে কটুক্তি করার পাশাপাশি স্ত্রীকে ইসলামের বিধান পালনে বাধা দেয় কিংবা স্ত্রীকে কটুক্তি করে।
এ সব ক্ষেত্রে স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাইতে পারে। এতে কোনো গোনাহ নেই বরং তালাক চাওয়া বৈধ। তবে এসব ক্ষেত্রে তালাক চাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করার কোনো সুযোগ নেই। বরং আগে স্বামীকে উল্লেখিত বিষয় বা সমস্যা সম্পর্কে সঠিক ধারণা বা বুঝানো কিংবা অভিভাবকের মাধ্যমে স্বামী সঠিক পথে আনার চেষ্টা করা জরুরি। যদি তাতেও সমাধান না হয় তবে এসব ক্ষেত্রে স্বামীর কাছে স্ত্রীর তালাক চাওয়া বৈধ।
মনে রাখতে হবে
যে সব স্ত্রী কারণ ছাড়াই স্বামীর কাছে তালাক চায় হাদিসে তাদের ব্যাপারে কঠোর পরিণতির কথা বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
‘যদি কোনো নারী (স্ত্রী) অহেতুক তার স্বামীর কাছে তালাক চায় তবে তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম হয়ে যায়।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)
বিএসডি/আইপি