কক্সবাজার প্রতিনিধি :
কক্সবাজারে পর্যটক স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ফোন করে জানালেও ভিকটিমকে উদ্ধারে পুলিশ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খুলেন তিনি। তার পর ফোন দেন পুলিশের জাতীয় সেবা ৯৯৯- নম্বরে। পুলিশ তাকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার না করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়।
এর পর র্যাবকে ফোন করে জানালে র্যাব ১৫-এর একটি টিম এসে তাকে উদ্ধার করে। তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করা হয় পর্যটন গলফ মাঠ এলাকা থেকে।
পুলিশ ধর্ষণের শিকার নারীকে উদ্ধারে এগিয়ে না আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ভিকটিমের অভিযোগের বিষয়টি অবগত হয়েছি। ৯৯৯ একটি জাতীয় সেবা। তাৎক্ষণিক বিপদগ্রস্তরা সহায়তার জন্য এ নম্বরে কল করে থাকেন এবং ফোন পাওয়া মাত্র তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের একটি টিম সব সময় প্রস্তুত থাকে।
তিনি বলেন, ভিকটিমের অভিযোগ গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে দায়িত্বে অবেহলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গণধর্ষণের ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি উল্লেখ করে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ভিকটিম পরিবারের পক্ষ থেকে হয়তো প্রস্তুতি নিতে একটু দেরি হচ্ছে। এর পরও পুলিশ জড়িতের ধরতে মাঠে নেমেছে।
এদিকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিন ধর্ষক ও ধর্ষণে সহযোগিতাকারী ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়ে র্যাব। তাদের মধ্যে দুজনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
তারা দুজন হলেন— আশিকুল ইসলাম ও আব্দুল জব্বার জয়া। আশিক চার মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। তিনি ছিনতাই, মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি বলে জানা গেছে।
এর আগে ঢাকা থেকে সপরিবারে ভ্রমণে এসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই গৃহবধূ।
তার অভিযোগ, কক্সবাজার শহরের লাবণী পয়েন্ট থেকে তুলে নিয়ে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি ও হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে দুদফা সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে তিন যুবক।
খবর পেয়ে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের হোটেল থেকে বুধবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে তাকে উদ্ধার করে র্যাব-১৫।
ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, বুধবার সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। উঠেন শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে।
সেখান থেকে বিকালে যান সৈকতের লাবনী পয়েন্টে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়।
এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় তাকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিনজন।
এর পর তাকে নেওয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করেন ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা।
ওই নারী আরও জানান, জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তা কক্ষের দরজা খুলেন তিনি। তারপর ফোন দেন ৯৯৯-এ। পুলিশ তাকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়।
তারপর পাশের একজনের সহযোগিতায় কল দেন র্যাবকে। তারা এসে তাকে উদ্ধার করে। তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করা হয় পর্যটন গলফ মাঠ এলাকা থেকে।
ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, সামান্য ধাক্কা লাগার কারণে তারা আমার এত বড় ক্ষতি করল। অপরিচিত বলে শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গেলেও, সে জায়গা ও দুর্বৃত্তদের চিনতে পারিনি।
‘বারবার হাতে-পায়ে ধরলেও তারা আমার স্ত্রীকে ফেরত দেয়নি। বেড়াতে এসেছিলাম বেতন পাওয়ার খুশিতে। এখন স্ত্রীর অবস্থা ভালো নয়, তাকে নিয়ে চিন্তায় আছি।’
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, খবর পেয়ে স্বামী-সন্তান ও গৃহবধূকে উদ্ধার করি। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিন ধর্ষক ও ধর্ষণে সহযোগিতাকারী ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছি। এ ঘটনায় মামলার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। মামলার পর পরই জড়িতদের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করা হবে।
বি এস ডি/এসএস