নিজস্ব প্রতিবেদক
নারীর মর্যাদা ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করা, সমকাজে সমমজুরি, কর্মক্ষেত্রে নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারী-বিদ্বেষী সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, গণপরিবহনসহ ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারী-শিশু ধর্ষণ-নির্যাতনের সব ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম।
শনিবার (৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে নারী নেত্রীরা বলেন, সমাজের সব ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা পালন, অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বহুযুগের লাঞ্ছনার অবসান ঘটিয়ে মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা হয়। কিন্তু নারী দিবস প্রতিষ্ঠার ১১৫ বছর পরও আমাদের দেশের নারীরা আইনগতভাবে, পারিবারিকভাবে, কর্মক্ষেত্রসহ সবক্ষেত্রে চূড়ান্ত বৈষম্যের শিকার। বর্তমানে যুক্ত হয়েছে নারী-বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড। নারীর পোশাক, চলাফেরা, খেলাধুলা সবকিছুতে তাকে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। নারী নির্যাতন এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সী নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নিজের ঘর বা বাইরে কোথাও সে নিরাপদ না।’
তারা বলেন, পাড়ায় পাড়ায় মাদক ও পর্নোগ্রাফি বন্ধ করতে হবে। পরিবার ও সমাজে নারীর ভূমিকা ও শ্রমের স্বীকৃতি দিতে হবে। অবিলম্বে ওয়াজ মাহফিলের নামে পাড়ায় পাড়ায় যে নারী বিদ্বেষী মনোভাব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা বন্ধ করতে হবে। নারীর পোশাক ও চলাফেরা নিয়ে প্রশ্ন করা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নারীর সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি যে সমাজব্যবস্থা ও মানসিকতার জন্য এরকম ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে তা পরিবর্তনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
নারী নেত্রীরা বলেন, কর্মক্ষেত্রে যে নারীরা আছেন তাদের সমমর্যাদা ও সমমজুরি আজও নিশ্চিত করা যায়নি। নিশ্চিত হয়নি তার মাতৃত্বকালীন অধিকার। নারী প্রধান কাজের ক্ষেত্রে মজুরি কম থাকে। স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হয়নি। কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন-নিপীড়ন খুবই স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এলাকাভিত্তিক বা কর্মক্ষেত্রে ডে কেয়ার সেন্টার না থাকার কারণে অনেক নারীরা কর্মক্ষেত্র থেকে ঝরে যাচ্ছে বা আসছে না। পুঁজিবাদী দেশে নারীরা দ্বৈত শোষণের শিকার হয়। একদিকে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার শোষণ, অন্যদিকে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার শিকার। প্রকৃত নারী মুক্তি সম্ভব সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলে। তাই নারীদের মুক্তি আন্দোলন সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। শোষণহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই নারীর উপর সব ধরনের শোষণকে বন্ধ করা সম্ভব।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মনীষা চক্রবর্তী, ঢাকা নগরের সাধারণ সম্পাদক রুখশানা আফরোজ আশা, সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফা বেগম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ।