নিজস্ব প্রতিবেদক:
চার দফায় ১০ দিনের মতবিনিময়সভা থেকে যেসব পরামর্শ এসেছে, এর মধ্যে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়াসহ দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। আগামী দিনে দলের কর্মকৌশল সেভাবেই ঠিক করা হবে বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা ছাড়াও বিএনপি সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে দলটি। তারা ১০ থেকে ১২টি বিষয়কে গুরুত্ব দিলেও দুটি বিষয়ে জোর দিচ্ছে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়াও গুণগত পরিবর্তন এনে দলকে জনগণের আস্থার জায়গায় নিয়ে যাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা গত ১৫ বছর ধরে করা যায়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, মতবিনিময়সভাগুলো থেকে পাওয়া মতামতের ভিত্তিতে করণীয় বিষয়ে খসড়া তৈরি করতে দলটির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সামনের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগামী দিনে আমাদের দলের লক্ষ্য- উদ্দেশ্য কী হবে সে বিষয়ে বৈঠকগুলোতে অংশ নেওয়া নেতারা মতামত দিয়েছেন। সম্ভবত আগামী ১৩ অক্টোবর দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের দিন ধার্য আছে। সেখানে এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মতবিনিময় করে পাওয়া পরামর্শগুলোর ব্যাপারে দলের যে সিদ্ধান্তই আসুক না কেন, আমরা তা জাতির কাছে, আমাদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তুলে ধরব।’
বিএনপির ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা। গত ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর ও ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর দলটির ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকমণ্ডলী, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাংগঠনিক জেলা, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দুই দফায় ছয় দিন রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তাঁরা। এরপর আইনজীবীসহ দলের সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর এক দফা বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত শুক্র ও শনিবার দুই দিনে আরো ৪৬টি পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। সব বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এসব বৈঠক থেকে পাওয়া মতামত লিপিবদ্ধ করেন দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। সেগুলো পর্যালোচনা করে দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা ১০ থেকে ১২টি বিষকে গুরুত্ব দিয়ে খসড়া চূড়ান্ত করেছেন।
এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকা এক নেতা নাম প্রকাশ না করে কালের কণ্ঠকে বলেন, বেশ কিছু পরামর্শ এসেছে। এর মধ্যে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে করা যায়, সে কর্মপন্থা ঠিক করার পরামর্শই বেশি এসেছে। কর্মপন্থা চূড়ান্ত করার পর পরিস্থিতি বুঝে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি দেবে বিএনপি। রাজপথে নামার আগে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে জনগণের দাবিতে পরিণত করতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা। তিনি জানান, নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের পরামর্শ ছাড়া বৈঠকে বেশির ভাগ নেতাই নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আন্দোলন জোরদার করার পক্ষে মত দিয়েছেন। কেউ কেউ দলের অঙ্গসংগঠনগুলো, বিশেষ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের দায়িত্ব যোগ্য নেতৃত্বের হাতে দিয়ে পুনর্গঠন করতে বলেছেন, যাতে এসব সংগঠনকে আন্দোলনমুখী করা যায়। এ বিষয়গুলোই চূড়ান্ত খসড়ায় থাকবে। সেটা কাটছাঁট করে স্থায়ী কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যটাই থাকবে হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না, বিএনপি তাতে যাবে না, সেই নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের দাবি কিভাবে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে আন্দোলনে তাদের শামিল করা যায়, সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’
বিএসডি / আইকে