নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিরাপদ সড়ক ও সারাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য ’হাফ ভাড়া’ পাসসহ নয় দফা দাবিতে শাহবাগে কফিন নিয়ে মিছিল করেছে একদল শিক্ষার্থী। এই কর্মসূচি থেকে আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্বলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। অপরদিকে রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের ওপর অবস্থান নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ১২টার দিকে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচী পালন করেন তারা।
রবিবার (৫ ডিসেম্বর) বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে বৃষ্টির মধ্যে বেলা পৌনে ১টার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচিতে ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন ও প্রতিবাদী গানের আসর আয়োজনের কর্মসূচি দেওয়া হয়।
পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নাঈম হাসান ও মাইনুদ্দিন ইসলামের স্মরণে শোক জানাতে আগামীকাল সোমবার (৬ ডিসেম্বর) কালো ব্যাজ ধারণ ও মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভের ঘোষণা দেন রামপুরা ব্রিজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ইনজামুল হক জানান, নিরাপদ সড়ক ও হাফ পাসের দাবিতে দেশের ১৮টি জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এর মধ্যে বরিশালে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করা হলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। রেল মন্ত্রণালয় ও নৌ মন্ত্রণালয়ে হাফ পাসের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করার কথাও জানানো হয়। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলন নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবিগুলো হলো-
১. বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই বিধান সংবিধানে সংযোজন করতে হবে।
২. নৌপরিবহনমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না।
৪. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।
৫. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভারব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. প্রত্যেক সড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিডব্রেকার দিতে হবে।
৭. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের নিতে হবে।
৯. শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য নিঃশর্ত হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এর আগে, শনিবার (৪ ডিসেম্বর) নিরাপদ সড়কের দাবিতে লাল কার্ড দেখিয়ে প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা। মূলত জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর ৭ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে বাসের ভাড়া ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। এরপর ১৮ নভেম্বর অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যু হয়। পরদিন রাজধানীর পান্থপথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান এক সংবাদকর্মী।
এর কয়েক দিন পর রামপুরায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মাঈনুদ্দিন দুর্জয় নামে আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তারপর থেকে নিরাপদ সড়ক, অর্ধেক ভাড়াসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাজধানীতে বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় পরিবহন মালিক সমিতি। শুধু ঢাকার জন্য অর্ধেক ভাড়া প্রত্যাখ্যান করে আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।
বিএসডি/এসএফ