নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সাত মাস অতিবাহিত হলেও গণঅভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তেমনটা উঠছে না বলে অভিযোগ করেছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, মানুষ নতুন দল পাওয়ার জন্য হাহাকার করছে, কেন ভোট হচ্ছে না সেটা বলছে, কিন্তু বিচারটা যে হচ্ছে না, সেটা নিয়ে কারও দরদ নেই।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিচারের দাবি জানিয়ে নিহত ইয়াসিনের মা শিল্পী আক্তার বলেন, আমরা কি বিচার পাব না? আসলে কি বিচার হচ্ছে? সাত মাসে তো সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে। নতুন দল পাওয়ার জন্য মানুষ হাহাকার করছে, কেন ভোট হচ্ছে না সেটা বলছে, কিন্তু বিচারটা যে হচ্ছে না, সেটা নিয়ে কারও দরদ নেই। আসলে কী আমাদের নিয়ে কেউ ভাবছে?
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের খুনিরা এখনো রাস্তায় হাঁটে দাবি করে তিনি বলেন, কোন গ্রুপ তাদের দলে টানছে নাম উল্লেখ নাই করলাম। আমাদের তো বাঁচতে হবে, আরেকটা সন্তান আছে, এলাকায় থাকতে পারি না, দুইটা-তিনটা বাসা পরিবর্তন করেছি। একটা ছোট্ট দোকান ছিল, সেখানে ঢুকতে পারি না, দুই-তিনবার হামলা করেছে। এখন জীবন নিয়ে হুমকিতে আছি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিচারের অগ্রগতি হচ্ছে না দাবি করে গোলাম নাফিজের বাবা মো. গোলাম রহমান বলেন, সরকারের কাছে অনুরোধ আপনারা যাই করুন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিচার যাতে পরিপূর্ণ হয়। যদি বিচার করতে না পারেন, পরবর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাহলে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার মতো জবাবদিহি করতে হবে।
নিহত আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেন, আমাদের ছেলেদের রক্তের বিনিময়ে শুনছি স্বাধীনতা পেয়েছি, স্বাধীনতা দেখছি। কিন্তু আমরা সন্তান হত্যার বিচারের দাবিতে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরছি। সাতটি মাস হয়ে গেল, বিচারের নামে প্রহসন দেখছি, প্রতারণা দেখছি। আদৌ কি বিচার হবে?
নিহত ইমাম হাসান তায়েফের ভাই রবিউল আউয়াল ভূঁইয়া বলেন, দ্বিতীয় স্বাধীনতা যাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে, তাদের রক্তের সঙ্গে কি বেইমানি করা হচ্ছে না? সাত মাসে বিচারের কি দেখেছি? কয়েকদিন পরে আমাদের বলতে হবে বিচার কর হারামজাদা না হয় মানচিত্র খাবো। আমরা বিচারের ন্যূনতম কিছু দেখছি না। সাতমাস ধরে আমাদের মূলা ঝুলাচ্ছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত বিচারের দাবি জানিয়েছেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান। সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। অনুষ্ঠানে লেখক, কবি, বুদ্ধিজীবী শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ২০২৫ অনুষ্ঠানে কবিতায় কবি মতিন বৈরাগী, শিশু সাহিত্যে ‘ফয়েজ আহমেদ পুরস্কার’ কবি হাসান হাফিজ এবং ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ সম্মাননা পুরস্কার’ কবি জুলফিকার হোসেন তারাকে প্রদান করা হয়। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নিহত ৫ জনের পরিবারের সদস্যরা।