বর্তমান সময় ডেস্কঃ
বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় সংলাপে তিন দফা প্রস্তাব পেশ করেন দলটির আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংলাপে এই প্রস্তাব পেশ করেন তিনি। সংলাপে রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
জাতীয় সংলাপে তিন দফা প্রস্তাব উত্থাপন করে ইসলামী আন্দোলন আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা তিনটি প্রস্তাব বিবেচনার জন্য পেশ করছি।
প্রস্তাব তিনটি হলো- ১. বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত একতরফা তফসিল বাতিল করে গ্রেপ্তারকৃত বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
২. বর্তমান বিতর্কিত পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে (জাতীয় সরকারের গুরুত্ব, বাস্তবতা ও রূপরেখা জাতীয়ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে)।
৩. কার্যকরী সংসদ, রাজনৈতিক সংহতি এবং শতভাগ জনমতের প্রতিফলনের জন্য পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনই অধিকতর উত্তম পদ্ধতি; যা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে তা প্রবর্তন করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আধুনিক রাষ্ট্রে সেপারেশন অব পাওয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বজনবিদিত একটি মৌলিক নীতি। সেপারেশন অব পাওয়ার নিশ্চিত করা হয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। বর্তমান সরকার পরিকল্পনা করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের মতো মৌলিক প্রতিষ্ঠানে বারবার দলান্ধ ব্যক্তি বসানো হয়েছে। বিচার বিভাগকে সরকারের আজ্ঞাবহ বানানো হয়েছে। নির্বাচনে বিরোধী নেতাদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত করতে আদালতকে ব্যবহার করে গণহারে বিরোধী নেতাদের অপরাধী সাব্যস্ত করে রায় দেওয়া হচ্ছে। দুদককে বিরোধী নেতাদের দমন কমিশন বানানো হয়েছে। অডিটর জেনারেলের অফিসকে দলীয় দুর্নীতি আড়াল করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংসদ বহু আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর আজ্ঞাদাসে পরিণত হয়ে আছে। রাষ্ট্রপতির চেয়ারেও এখন প্রধানমন্ত্রীর ভক্তিতে আপ্লুত ব্যক্তি বসানো হয়েছে। জনপ্রশাসনকে দলীয় কর্মী বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। সাবেক মুখ্য সচিবরা যেভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী রাজনীতিতে ভূমিকা রাখছেন, তাতেই বিষয়টা পরিষ্কার।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিনাশী হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে মুফতী রেজাউল করীম বলেন, গণতান্ত্রিক দলীয় রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে পরস্পর বিনাশী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সরকারি দল বিরোধী শক্তিকে ধ্বংস করতে চায়। সেটা যেমন অপরাজনীতির মাধ্যমে তেমনি শারীরিকভাবেও। প্রতিবাদী সমাবেশে গুলি করা, মানুষ গুম করা তো বহুল চর্চিত সংস্কৃতি। লাখো মানুষের সমাবেশে রাতের অন্ধকারে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা, নির্বিচারে গুলি করার নজীর জাতি দেখেছে। সাম্প্রতিক দিনে দুপুরে একই ধরনের নির্মমতা দেখেছে দেশবাসী।
দলগুলোর ভেতরের অবস্থা নিয়ে নতুন করে কথা বলতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী কার্যত একজন সম্রাজ্ঞীতে পরিণত হয়েছেন। তাকে ঘিরেই সবকিছু আবর্তিত হচ্ছে। দুই দলীয় মানসিকতাও দেশের রাজনীতির জন্য অশুভ পরিণতি ডেকে এনেছে। আজকে বিএনপি বিপদে পড়েছে মানে দেশে বিরোধী রাজনীতি শূন্য হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বহুদলীয় রাজনীতি থাকলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয় না।
বিএসডি/আরপি