নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভাগনে ও নীলফামারী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন বলেছেন, দেশের দ্রুত নির্বাচন দিয়ে আপনারা সম্মানের সহিত বিদায় নিন। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না। নিম্নআয়ের মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে এই জনপদের মানুষ উন্নয়নবঞ্চিত হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা চাকরি পায়নি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সব বৈষম্য দূর করা হবে।
রোববার (১৮ মে) সন্ধ্যায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা সদরের ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে নিজের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ডিমলা উপজেলা বিএনপি এই গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর আগে গত শনিবার জেলা শহরে তুহিনকে গণসংবর্ধনা দেয় জেলা বিএনপি।
শাহরিন ইসলাম তুহিন বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার মিথ্যা মামলায় আমাকে দীর্ঘ সাড়ে ১৮ বছর দেশ ছাড়া করে রেখেছিল। শুধু আমাকেই নয়, এই সময়ের মধ্যে পুরো দেশকেই কারাগারে পরিণত করেছিল। মানুষ এখন নিশ্বাস নিতে পারছে। আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীদের যে কী পরিমাণ অত্যাচার-নির্যাতন মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমি শুধু আল্লাহকে মনে-প্রাণে ডেকেছি। আপনাদের দোয়া আল্লাহপাক কবুল করেছেন। তিনি (আল্লাহ) চাইলে সবই হয়। আমি এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে পারছি, আমার এলাকার মানুষদের বুকে টেনে নিতে পারছি। এর চেয়ে আমার আর কিছু চাওয়া–পাওয়া নেই।
১৮ বছর পর নিজ এলাকায় ফিরে অনেক ভালো লাগছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতৃবৃন্দ বলছেন ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে দেশে নির্বাচন হয়। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি এই সরকারের মধ্যেও নানাবিধ চিন্তা ভাবনা। নানাবিধ বক্তব্য। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের নেতাকর্মীরা কখনো পাতানো এই ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। আমাদের নেতা তারেক রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাইরে আপনারা কোনো কিছু চিন্তা করবেন না। ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রয়োজনে রাজপথে নামতে হবে। এ জন্য দলের নেতা-কর্মীদের তৈরি থাকতে বলেন তিনি।
দীর্ঘদিন দেশের বাহিরে থাকার পর গত ২২ এপ্রিল তুহিন দেশে ফিরেন। এরপর গত ২৯ এপ্রিল সকালে কর ফাঁকির মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ-৯ কবির উদ্দিন প্রামাণিকের আদালতে আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছিলেন তুহিন। পরে শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। পাশাপাশি একইদিন অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ প্রদীপ কুমার রায়ের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। এ মামলাতেও শুনানি শেষে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেছিলেন। এরপর তুহিনের কারামুক্তির দাবি তুলে রংপুর বিভাগীয় শহর ও গোটা নীলফামারীর বিএনপির নেতাকর্মীরা টানা ৭ মে পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অব্যাহত রাখে। এরপর ৮ মে তার দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির গ্রহ করে হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ আলী ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলির বেঞ্চ তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।
শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের পৈতৃক বাড়ি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার গোমনাতি গ্রামে। তার বাবা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও ডিন ছিলেন। তুহিনের মা সেলিনা ইসলাম বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বড় বোন। সে হিসাবে তুহিন খালেদা জিয়ার ভাগনে এবং তারেক রহমানের খালাতো ভাই। তুহিন বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য।