নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম মহাসড়কে চলছে দূরপাল্লার বাস। আজ শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর এলাকায় মহাসড়কে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার বাসগুলোকে সেতু পারাপার হতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বাসগুলোকে সেতু পারাপার হতে দেখা যায়।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা থেকে আজ শনিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত সেতুর পূর্ব পাড় থেকে ১৪ হাজার ৪৭৭টি যানবাহন সেতু পার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৬ হাজার ৭০ টাকা। অপর দিকে পশ্চিম পাড় থেকে সেতু পার হয়েছে ১৬ হাজার ৬৩৭টি যানবাহন। টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ ৪১ হাজার ২৭০ টাকা।
আজ ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম মহাসড়কের সেতু গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায়, ভোর থেকেই বিভিন্ন গন্তব্যে দূরপাল্লার বেশ কিছু বাস ছেড়ে যাচ্ছে। মহাসড়কটির গোলচত্বরের ওপর পুলিশের তল্লাশিচৌকি বসানো হলেও কোনো দূরপাল্লার বাস সেখানে আটকাতে দেখা যায়নি। মহাসড়কটির কড্ডা মোড় এলাকায় সকাল সাড়ে ৬টার দিকে অনেক দূরপাল্লার বাসেই ডেকে ডেকে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। এসব বাসের মধ্যে আছে ঢাকা-রংপুর তারাগঞ্জ লেখা থ্রীস্টার পরিবহন, ঢাকা-বগুড়া লেখা রাকিব পরিবহন, ঢাকা-রংপুর লেখা শ্যামলী পরিবহন, ঢাকা-নওগাঁ লেখা অন্তর পরিবহন, ঢাকা-কুষ্টিয়া লেখা লালন পরিবহন, শিউলি পরিবহন, জেআর রাফাত পরিবহন, আল-ইমরান পরিবহন, সুরমা পরিবহন, আজাদ পরিবহনসহ অনেক দূরপাল্লার বাস মহাসড়কটিতে চলতে দেখা যায়।
সাড়ে চার ঘণ্টা সময় মহাসড়কে অবস্থানকালে প্রায় প্রতি ১০ মিনিট পরপর দুই থেকে তিনটি করে দূরপাল্লার বাস সেতু পার হতে দেখা যায়। তবে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এসব বাসে যাত্রীর সংখ্যা নেই বললেই চলে। পরে বাসভর্তি যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে অনেক বাসকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজার একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন বিকেলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসগুলো সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বর, সয়দাবাদ গোলচত্বর, কড্ডার মোড় এলাকায় আটকে দেওয়া হয়। তবে রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে এসব বাসগুলোকে অবাধে সেতু পারাপার হতে দেয় পুলিশ।
একই কথা জানালেন বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম গোলচত্বর এলাকার স্থানীয় সয়দাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবদুল মমিন। তিনি বলেন, ‘যেভাবে অবাধে দূরপাল্লার বাস মহাসড়কে চলছে, তাতে আমরা ধরেই নিয়েছি সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তা না হলে পুলিশের সামনে এসব বাস চলছে কীভাবে?’
নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে কর্মরত কর্মী আবদুল মালেক বলেন, প্রতিদিন বিকেল থেকেই কিছু বাস মহাসড়কে আটকাতে দেখা যায়। এসব বাসের যাত্রীদের সঙ্গে পুলিশের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে বাসগুলোকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
কথা হয় এসআই পরিবহনের যাত্রী সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের সয়াধানগড়া মহল্লার আজাদ রহমানের সঙ্গে (৪৬)। তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় সরাসরি কোনো বাস যাচ্ছে না। তবে এসআই, অভি এসব সিরাজগঞ্জের বাস গাজীপুরের চন্দ্রায় যাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে আবার লোকাল বাসে করে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় যেতে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান আলী বলেন, মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে রাতে উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার বাস কোনো জেলার মহাসড়কে আটকে না দেওয়ায় এগুলো এসে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি করে। ফলে মাঝেমধ্যে এসব পরিবহনকে তাদের গন্তব্যে যেতে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এখনো অনেকে ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরছেন।
জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (কামারখন্দ-বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সার্কেল) শাহিনূর কবির বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের সয়েদাবাদ এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য দূরপাল্লার বাস আটকে দিয়ে আবার ফেরত পাঠানো হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা না মেনে মহাসড়কে অবাধে দূরপাল্লার বাস চলাচলের কোনো সুযোগ নেই।