যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েও। নিজেদের মধ্যে এসব আলোচনায় সবারই জানার আগ্রহ কারা এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে যাচ্ছেন। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও নীরবে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা খোঁজ রাখছেন। তবে অধিকাংশ কর্মকর্তাই এ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। সচিবালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
২২ সেপ্টেম্বর ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞায় থাকা ব্যক্তিদের তালিকা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য।
২২ সেপ্টেম্বর ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞায় থাকা ব্যক্তিদের তালিকা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য।
এর পর থেকে অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন মাধ্যমে জানার চেষ্টা করছেন কে কে আছেন তালিকায়। অনেকেরই এ বিষয়ে আরও নতুন কোনো খবর আছে কি না তা জানার রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। একাধিক সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এ বিষয়ে প্রথমে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। একজন সচিব জানতে চান এ বিষয়ে নতুন কোনো তথ্য আছে কি না। একজন সিনিয়র সচিব বলেন, অনেকের সন্তান দেশের বাইরে পড়াশোনা করেন। একটা বাড়তি টেনশন তো থাকেই। ১৩ ব্যাচের এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আমাদের সিনিয়র এবং আমাদের ব্যাচের অনেকের টেনশন দেখেছি। আবার অনেকের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই। সচিব যারা আছেন তারা হয়তো নিজেদের মতো করে খোঁজ নিচ্ছেন।’ ভিসানীতি বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব বলেন, ‘আমরা আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর নিতে চাই না।’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে সরকারের বিরাগভাজন হওয়া যাবে না। আর কে কী ভাবছেন তা বিবেচ্য নয়।’ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপসচিব বলেন, ‘হয়তো অনেক স্যার আমেরিকা যান বা যেতে চান তাদের টেনশন থাকাটা স্বাভাবিক। অনেক স্যারের সন্তান থাকে সে দেশে। আমাদের এসব নিয়ে ভাবনা নেই। আমরা মাঝারি মানের কর্মকর্তা আমাদের ব্যাচের আগের ব্যাচেও এসব নিয়ে ভাবতে দেখিনি, শুনিনি। তবে এ নিয়ে অনেকেই রুমে রুমে গল্প করেন।’
প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে অনেকেই চাপ অনুভব করছেন তা-ও জানা গেছে কয়েকজনের কথায়। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি। মার্কিন ভিসা ইস্যুতে কোনো চাপ নিয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি সরকারি কর্মকর্তা। এসব বিষয় আমার মাথায় নেই। বাংলাদেশ যদি ভিসানীতি করে আমেরিকার একজন সিভিল সার্ভেন্ট কি সেটা নিয়ে টেনশন করবে? যাদের অসুবিধা হবে মনে করছে তারা হয়তো টেনশনে ভুগতে পানে। সেটা আমি জানি না। আমার মনে হয় না একজন কর্মচারী এসব নিয়ে ভাববে।’ সাবেক এক মন্ত্রিপরিষদ সচিব নাম প্রকাশ না করে বলেন, স্যাংশন আর ভিসানীতি এক নয়। মার্কিন ভিসানীতিতে কী আছে, কারা সেই নীতিতে পড়েছে সেটা কিন্তু কেউ জানে না কারণ তারা প্রকাশ করে না। আমেরিকার ভিসা আবেদন করলেই কি সবাই পায়? পায় না। অনেক আবেদনকারীকেই বিভিন্ন কারণে ভিসা না দিতে পারে। আমাদের দেশ থেকে অনেক দেশের নাগরিককে ভিসা না দিতে পারে। কর্মকর্তাদের ওপর এ ভিসানীতির কোনো চাপ কি না- জানতে চাইলে এটা একেকজনের কাছে একেকরকম। যার আমেরিকায় যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই তার কাছে এটি কিছুই না। যার নির্বাচনে সংশ্লিষ্টতা নেই তার কাছেও এসব কিছু না। আর নির্বাচনের কোন ভূমিকার জন্য ভিসা রিজেক্ট করবে সেটাও কিন্তু আমরা জানি না। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনটাকে বাধা বলবে, কোনটাকে বাধা বলবে না আমরা তো জানি না। সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনের ইস্যুটা এবার ভিন্ন। এর মধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চাপে নির্বাচন কি হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে সবাই খোঁজখবর রাখছেন। আর ভিসানীতিতে নতুন করে কার নাম এলো সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করছেন। তবে প্রশাসনের যুগ্মসচিব, উপসচিবসহ মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বড় একটি অংশ বলছে, এ ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রশাসনে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। নির্বাচনের কাজটি মাঠ প্রশাসন থেকে করা হয়। সেখানে কর্মকর্তাদের একটি ছোট অংশই নির্বাচনসংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করে থাকে। অনেকেই মনে করছেন যারা মাঠ প্রশাসনে থেকে নির্বাচন সামলান তাদের মধ্যে একেবারেই হাতেগোনা কয়েকটি পরিবারের যুক্তরাষ্ট্র-সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। গুটিকয় সংশ্লিষ্টতা পুরো প্রশাসনের জন্য বড় কিছু নয়।
বিএসডি/এসএস