আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল শ্রীলঙ্কার রাজপথ। পার্লামেন্টেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন তিনি। তারপরও প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন দেশটির একজন মন্ত্রী। তবে জনতার অব্যাহত বিক্ষোভের মধ্যেই এদিন গত শুক্রবার জারি করা জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া।
শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে বিরোধী ও সদ্য সরকারি পক্ষত্যাগকারী আইনপ্রণেতারা পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এর মধ্যে সড়কমন্ত্রী জনস্টন ফারনান্দো বলেন, ‘আমি আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ৬৯ লাখ মানুষ প্রেসিডেন্টকে ভোট দিয়েছেন। সরকার হিসেবে আমরা স্পষ্ট করে বলছি, কোনো অবস্থাতেই প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করবেন না। আমরা পরিস্থিতি মোকাবেলা করব। ’
স্বাস্থ্যসেবা খাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার দাবি
সড়কমন্ত্রী ফারনান্দো যখন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পক্ষ নিয়ে পার্লামেন্ট কথা বলছিলেন, তখন শ্রীলঙ্কার রাজপথে স্লোগানমুখর চিকিৎসকরা। অন্য পেশাজীবীদের সঙ্গে রাস্তায় নামেন তারাও। শ্রীলঙ্কার চিকিৎসকরা অব্যাহত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে স্বাস্থ্য খাতে জরুরি অবস্থা জারির দাবি জানান।
রাষ্ট্র পরিচালিত অপেক্ষা হসপিটালের চিকিৎসক মালাকা সামারারত্ন জানান, ওই হাসপাতালে প্রতি বছর হাজার হাজার ক্যান্সার রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। এখন পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে কেবল যে ওষুধের অভাব দেখা দিয়েছে তা নয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থের মজুদও ফুরিয়ে আসছে।
শ্রীলঙ্কার সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠনের মুখপাত্র ভাসান রত্নসিংহাম শিশুদের জন্য বিশেষায়িত লেডি রিজওয়ে হসপিটালে কাজ করেন। তিনি জানান, ওই হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ ওষুধগুলোর মধ্যে অন্তত একটি ওষুধ একেবারে ফুরিয়ে গেছে। অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধও ফুরিয়ে আসছে। এভাবে চলতে থাকলে চিকিৎসকেরা দৈনন্দিন রোগী দেখার কাজ, এমনকি অস্ত্রোপচারও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন বলে সতর্ক করেন রত্নসিংহাম।
জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার
অব্যাহত গণবিক্ষোভের মধ্যেই জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করেছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। এক সরকারি গেজেটে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়। গত সপ্তাহে জরুরি অবস্থা জারি করা সত্ত্বেও দেশটিতে গণবিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে তাৎক্ষণিকভাবে চীন ও ভারতের কাছ থেকে নতুন করে অর্থনৈতিক সহায়তা নিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার। বিরোধীদের নিয়ে ঐক্যের সরকার গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া। কিন্তু কোনো পদক্ষেপেই কাজ হয়নি। বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি। দেখা যাচ্ছে না অর্থনৈতিক সংকট শিগগিরই অবসানের আলামতও। নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের ঘাটতি কমেনি, কমেনি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। অর্থাভাবে বেশ কয়েকটি দেশে দূতাবাস পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে দেশটির সরকার।
ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কায় খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সংকটের জন্য ক্ষমতাসীন রাজাপাকসে পরিবারকে দায়ী করে বিক্ষোভ করছে সাধারণ মানুষ। তাঁরা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করছে।
চলমান সংকটের মধ্যে নতুন করে অস্বস্তিতে পড়ে গোতাবায়ার প্রশাসন। মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্য পদত্যাগ করার পর গত সোমবার নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে আলী সাবরিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। ঋণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার আগেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন নতুন অর্থমন্ত্রী।
বিএসডি/ এমআর