বর্তমান সময় ডেস্ক -
পদত্যাগের দাবিতে দেশজুড়ে আন্দোলনের মুখে থাকা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন অবশেষে পার্লামেন্টে আস্থা ভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার (৪ আগস্ট) এক টেলিভিশন ভাষণে ঘোষণাটি দেন তিনি।
বুধবারের ভাষণে নিজের প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ প্রশ্নের মুখে পড়েছে বলে স্বীকার করেছেন মুহিউদ্দিন, তবে এটিও বলেছেন- এখনো মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট দেওয়ান রাকইয়াতের অধিকাংশ আইনপ্রণেতার সমর্থন তার সঙ্গে আছে।
টেলিভিশনে নিজ বক্তব্যে মুহিউদ্দিন বলেছেন, সম্প্রতি আমার প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ নিয়ে কিছু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এবং এ সম্পর্কে আমি সচেতন। এ কারণে আমি মহামান্য রাজাকে বলেছি- উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের সংবিধান ও আইনি প্রক্রিয়া মেনে দেওয়ান রাকইয়াতে আস্থা ভোট হওয়া প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে পার্লামেন্ট সেশন শুরু হলে এই আস্থা ভোটের আয়োজন হবে। এটি আমার রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং আমি তা গ্রহণ করছি। কারণ, দেওয়ান রাকইয়াতের অধিকাংশ আইনপ্রণেতা আমার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যর্থতা, স্বেচ্ছাচারিতা, সংকটময় পরিস্থিতিতে অর্থনীতি পুনর্গঠনে সঠিক নির্দেশনা দিতে না পারা এবং অযৌক্তিকভাবে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের পদত্যাগের দাবিতে মালয়েশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ চলছে।
মুহিউদ্দিনের পক্ষের লোকজন যদিও বলছেন, দেশের করোনা মহামারির কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে, কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ- প্রধানমন্ত্রীর পদ সুরক্ষিত রাখতে মহামারির অজুহাত টানছেন তিনি ও তার পক্ষের লোকজন।
মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারব্যবস্থার দেশ মালয়েশিয়ায় এখনো রাজতন্ত্রের প্রচলন আছে। মালয়েশিয়ার রাজা দেশটির সরকারের আলঙ্কারিক প্রধান। তবে দেশে জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা এখনো তিনি রাখেন; যদিও এক্ষেত্রে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতে হয়।
মালয়েশিয়ার বর্তমান রাজা সুলতান আব্দুল্লাহ সুলতান আহমাদ শাহ সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, দেশে জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে তাকে ভুল পরামর্শ দিয়েছিলেন মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। গত সপ্তাহে এ কারণে প্রধানমন্ত্রীকে ভর্ৎসনাও করেছেন তিনি, যা দেশটির রাজনীতির ইতিহাসে বিরল।
২০২০ সালের মার্চে পার্লামেন্টে একদমই অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে মালয়েশিয়ার বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। জোটের প্রধান শরিক মালয়েশিয়ার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড মালয়েস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন পার্টি (ইউএমএনও) সে সময় তাকে সমর্থন দিয়েছিল। তবে গত জুলাই মাসের শুরুর দিকে সেই সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে দলটি।
মালয়েশিয়ার সরকারব্যবস্থা ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ পরিস্থিতিতে পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের আয়োজন করতে হবে। যদি মুহিউদ্দিন ইয়াসিন সেই ভোটে জিততে পারেন, তবেই তিনি এবং তার মন্ত্রিসভার সব সদস্য সুরক্ষিত থাকবেন।
এ দিকে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টের একটি সূত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, বুধবার দ্বিতীয়বারের মতো ইউএমএনও জানিয়েছে, মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের প্রতি দলটির সমর্থন নেই।
সূত্র : রয়টার্স, মালয় টাইমস
বিএসডি/এমএম