নিজস্ব প্রতিবেদক:
পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। আজ রবিবার (২৬ জুন) ভোর ৬টা থেকে থ্রি হুইলার ছাড়া সব ধরনের যান চলাচল শুরু হয়েছে বহু প্রতিক্ষিত এ স্থাপনার ওপর দিয়ে। অবিস্মরণীয় এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে দুই পাড় থেকেই ছুটে এসেছেন অসংখ্য মানুষ। ভোর থেকেই সেতুর দুই প্রান্তে ব্যক্তিগত গাড়ি, বাইক, ভাড়া করা গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক এবং যাত্রীবাহী বাসের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এতে টোল প্লাজাগুলোতে দেখা গেছে ব্যাপক চাপ।
প্রথমদিনে স্বপ্নের এই সেতু পাড়ি দেওয়ার স্মৃতি ধরে রাত থেকেই সেতুর কাছাকাছি এসে অপেক্ষা করছিলেন কেউ কেউ। অনেকেই মাওয়া ঘাটে রাতে এসে আড্ডা দিয়েছেন। পরখ করেছেন এখানকার ইলিশের স্বাদ। ভোরে সূর্যের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই টোল দিয়ে পাড়ি দিয়েছেন ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারে দ্বিতল এই সেতু।
ঢাকা থেকে আসা এক মোটরবাইক আরোহী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মূলত দেখার জন্যই এসেছি। ওপারে যাবো, কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আবার ফিরে আসবো। আসলে পদ্মা সেতুতো আমাদের আবেগের স্থাপনা। স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে বড় এই অর্জন নিজের চোখে উপভোগ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা কঠিন।’ দীর্ঘ যানজটের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘যানজটে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে এটাও উপভোগ করছেন সবাই। ভিড় হচ্ছে জেনেও সবাই আসছেন, ইতিহাসের সাক্ষী হতেই কিছুটা বিড়ম্বনা হলেও তা মেনেই আসছে অনেকেই।’
প্রথম দিনেই পদ্মা সেতু দিয়ে পাড় হচ্ছে বেশ কিছু পণ্যবাহী ট্রাকও। জাজিরা প্রান্ত থেকে পাড় হয়ে আসা কাঁচামালবাহী একটি ট্রাকের চালক আজিজ জানালেন উচ্ছ্বাসের কথা। বললেন, আগে দুই-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো ফেরিতে। আবার কোনও কোনও সময় আরও বেশি সময় লাগতো। সেই তুলনায় আজকের জ্যাম কিছুই না। ভালো লাগছে, এখন থেকে ঢাকায় দিনে দিনে মালামাল বহন করা যাবে। এখন সবজি নিয়ে যাচ্ছি, বিকালে ঢাকা থেকে আবার মালামাল নিয়ে ফিরে আসবো।’
দুই প্রান্তের ১৪টি টোল গেট চালু করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। সবকয়টিতে ম্যানুয়ালি আদায় করা হচ্ছে টোল। তবে প্রথম দিনে অনেকেই টোলের পরিমাণ না জানায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান টোল প্লাজার কর্মীরা। জাজিরা প্রান্তের টোল ম্যানেজার কামাল হোসেন বলেন, যানবাহনের চাপ কিছুটা বেশি। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। আসলে অনেকেই জানেন না টোল কত, সেকারণেও কিছুটা সময় লাগছে। দুএকদিনের মধ্যে চাপ আরও কিছুটা কমে আসবে আশা করছি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানান, সেতু নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকায় যান চলাচল শুরুর দিন রবিবার ভোর থেকেই ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রসওয়ে ভিড় জমায় শতশত যানবাহন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষও যথাযথ প্রস্তুতি রেখেছে, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন।
পদ্মা সেতু পারাপারে সরকার নির্ধারিত টোল হার- মোটরসাইকেল ১০০ টাকা, কার ও জিপ ৭৫০ টাকা, পিকআপ ১ হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১ হাজার ৩০০ টাকা, ছোট বাস (৩১ আসন) ১ হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) ২ হাজার টাকা, বড় বাস (থ্রি-এক্সেল) ২ হাজার ৪০০ টাকা, ট্রাক (পাঁচ টন পর্যন্ত) ১ হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (পাঁচ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ আট টন পর্যন্ত) ২ হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ ১১ টন) ২ হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাক (থ্রি-এক্সেল পর্যন্ত) ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (ফোর-এক্সেল পর্যন্ত) ৬ হাজার টাকা।
প্রসঙ্গত, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতু। একইসঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এ সেতুতে। চার লেনবিশিষ্ট ৭২ ফুট প্রস্থের এ সেতুর নিচতলায় রয়েছে রেল লাইন। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতুর পাইলিং ও নদীশাসনের কাজ উদ্বোধন করেন। এরপর একে একে সব ধাপ পেরিয়ে পদ্মার বুকে ৪২টি পিলারের ওপর দৃশ্যমান হয়ে ওঠে স্বপ্নের সেতু। এ সেতু চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে।
বিএসডি/ফয়সাল