মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীতে বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের ধাক্কায় গতকাল সোমবার ২৬ জন নিহত হয়েছে। লকডাউনের মধ্যে ওই স্পিডবোটটি ‘লুকিয়ে’ চলছিল বলে জানিয়েছেন নৌচলাচল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক। নৌ চলাচলও বন্ধের মাঝেও স্পিডবোট চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে যে প্রাণহানী হয়েছে, এখন তার দায় নিতে চাচ্ছে না কেউ। তবে, নৌচলাচল তদারককারী কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ বলছে, ঘাট বন্ধের মধ্যে ওই স্পিডবোট চলা আটকানোর দায়িত্ব ছিল নৌ পুলিশের। এদিকে বিআইডব্লিউটিএ’র ওপর অভিযোগের খড়্গ তুলেছে নৌপুলিশ।
দায় না নেওয়া, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যে মাদারীপুরের শিবচরে ঘটে যাওয়ায় দুর্ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিআইডব্লিউটিএ। তদন্তে যাদের গাফিলতি পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এদিকে, গতকাল সোমবার গভীর রাতে বাল্কহেডকে ধাক্কা দিয়ে স্পিডবোট ডুবে ২৬ প্রাণহানির ঘটনায় বোটের মালিক-চালকসহ চারজনের নামে মামলা হয়েছে। শিবচর থানায় মামলাটি করে নৌ-পুলিশ। তাতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আহত বোটচালক শাহ আলমকেকে। তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, স্পিডবোট দুর্ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি বোটের মালিক, চালক, ঘাটের ইজারাদারসহ চারজন। তবে, তিনি অন্যান্য আসামিদের পরিচয় জানাননি।
গতকাল সোমবার এ দুর্ঘটনা ও ২৬ মৃত্যুর ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক জানান, শিমুলিয়া ঘাট তালা দেওয়া ছিল। ওই ঘাট দিয়ে কোনো নৌযান চলাচল করছিল না, লঞ্চগুলোও ঘাটে নোঙর করা ছিল। স্পিডবোটটির চালক চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ‘গোপনে’ যাত্রী তুলে পারাপার করছিল। তবে স্পিডবোটটি অবৈধ নয়, এর চলাচলে অনুমতি ছিল বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে শিমুলিয়ার নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী পরিচালক শাহাদাত হোসেন জানান, স্পিডবোটটির কোনো নিবন্ধন ছিল না। এর চালকের ছিল না দক্ষতার সার্টিফিকেট। এই নৌরুটের বেশির ভাগ নৌযানের একই অবস্থা।
সোমবার ভোরে বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় থাকা বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের ধাক্কা লাগে। এতে ২৬ যাত্রী নিহত হন। ৬ জনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে আরও দুজন মারা যান। ঘটনাস্থলে শিবচর ফায়ার সার্ভিস, নৌ-পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালান।
শিবচরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আশিকুর রহমান জানান, মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে ৩০-৩৫ জন যাত্রী নিয়ে মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজারের দিকে আসছিল স্পিডবোটটি। ঘাটের কাছাকাছি এলে নোঙর করা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডে ধাক্কা দিয়ে স্পিডবোটটি উল্টে যায়।
এই ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজহারুল ইসলামকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া নিহতের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ডা. রহিমা খাতুন। আহতদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।