নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তনের কথা বলেছিলাম—সেই লড়াই এখনো শেষ হয়নি।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া মোড়ে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, এই রাষ্ট্রব্যবস্থার সবচেয়ে নির্মম চিত্র নারায়ণগঞ্জ শহর, যেখানে পরিবারতন্ত্র, মাফিয়াতন্ত্র ও গডফাদারতন্ত্র মিলেমিশে একাকার। একাধিক পরিবার বছরের পর বছর ধরে এই শহরের রাজনীতি, অর্থনীতি ও ব্যবসা কুক্ষিগত করে রেখেছে। এই ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতেই আমাদের আন্দোলন।
তিনি অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জের জনগণের ওপর বছরের পর বছর ধরে দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা সেই পুরোনো খেলায় আর অংশ নেব না। গণঅভ্যুত্থানে আমরা রক্ত দিয়েছি। এখন সময় এসেছে খেলার নিয়ম বদলানোর। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই নিয়ম আজও বদলায়নি। এখনো নারায়ণগঞ্জে খেলা চলছে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, গতরাতে কলেজরোডে আমাদের ‘জুলাই পদযাত্রা’র তোরণে আগুন দেওয়া হয়েছে। এই হামলার উদ্দেশ্য স্পষ্ট—মানুষকে ভয় দেখানো, এনসিপির কর্মসূচি বানচাল করা। কিন্তু জনগণ ভয় পায় না, আমরা ভয় পাই না।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর নারায়ণগঞ্জে একের পর এক খুন হয়েছে। শহীদ পরিবারগুলোর বাসায় গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মামলার বাদীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আওয়ামী লীগের মাফিয়াতন্ত্র এবং ব্যবসায়িক দখলদারিত্ব আবারও পুনর্বাসিত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে। আমাদের নারী কর্মীদের বাসায় পর্যন্ত গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা কখনো হুমকিতে ভয় পাইনি, এবারও পাব না।
তিনি নারায়ণগঞ্জকে “জনতার নারায়ণগঞ্জ” হিসেবে প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই শহর এক সময় ছিল শ্রমিক ও পাটশিল্পের শহর। আজ সেই গৌরব নেই। মাফিয়াতন্ত্রের হাতে ব্যবসায়ীরা জিম্মি। ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের কারণে ব্যবসা চালাতে পারছেন না। অথচ মাফিয়া ব্যবসায়ীদেরই প্রটেকশন দেওয়া হচ্ছে।
গত বছরের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্মরণ করে নাহিদ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জ যেমন প্রতিরোধ গড়েছিল, সাভার-আশুলিয়াও তেমন সাড়া দিয়েছিল। সেই প্রতিরোধের কারণেই ঢাকার জনগণ রাজপথে নেমে আসতে পেরেছিল। ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
তিনি বলেন, এই যুদ্ধ সেদিনই শেষ হবে, যেদিন পরিবারতন্ত্র-মাফিয়াতন্ত্র ভেঙে জনগণের গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠিত হবে। নারায়ণগঞ্জ কারও কাছে বর্গা দেওয়া হবে না। এই শহরের মানুষই নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।