ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের ইসরায়েলে শনিবারের আকস্মিক হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ‘সন্ত্রাসী হামলায় আত্মীয় বা নিকটজনদের যারা হারিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি’ বলে পোস্ট দেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার একেবারে প্রশ্নাতীত।’ জেলেনস্কির মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ আরও অনেক বিশ্বনেতা একই ধরনের মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন।
ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে— আজ এবং আগামী দিনে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের পাশে আছে।’
• পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে দুমুখো নীতির অভিযোগ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অনেক ব্যবহারকারী পশ্চিমা নেতাদের এসব বিবৃতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমারা সরব হলেও ফিলিস্তিন সংকটের হোতা ইসরায়েলের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হলেও সেই বিষয়ে ইসরায়েলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মতো সাহস পশ্চিমারা দেখাতে পারছেন না।
ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকারের বিষয়ে বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক নেতা প্রশংসা করলেও রাশিয়ার আক্রমণের নিন্দা জানায়। তবে ভাষ্যকাররা বলেছেন, পশ্চিম তীর এবং গাজায় ইসরায়েলের ৫৬ বছরের দখলদারিত্ব সম্পর্কে একই কথা পশ্চিমারা বলছেন না।
বামপন্থী ব্রিটিশ সাংবাদিক অ্যারন বাস্তানি এক্সে এক বার্তায় বলেছেন, ইউক্রেনে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হলে সেটিকে সন্ত্রাসবাদ বলা হচ্ছে। আর ফিলিস্তিনে একই ঘটনা ঘটলে তারা চুপ থাকছে। এটা পরিষ্কার দুমুখো নীতি। এই সাংবাদিক লিখেছেন, পশ্চিমাদের অবস্থাটা এমন যে, যারা আমাদের শত্রুদের সাথে লড়ছে, তারা মুক্তিযোদ্ধা। আর যারা আমাদের মিত্রদের সাথে লড়ছে, তারা সন্ত্রাসী।
অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী বলেছেন, পশ্চিমা কূটনীতিক ও গণমাধ্যম ইউক্রেনীয়দের সমর্থন করে; যারা তাদের ভূমি রক্ষা করছে। আবার তারাই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ফিলিস্তিনিদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে অভিহিত করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন নারীর একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ছে। যেখানে ওই নারীর একটি চোখ ফিলিস্তিনি পতাকার পাশে বন্ধ আর ইউক্রেনীয় পতাকার পাশে একটি চোখ খোলা দেখা যায়। এই দুই সংঘাতকে কীভাবে দেখা হয় সে সম্পর্কে পশ্চিমের কথিত ‘দ্বৈত নীতির’ প্রতীক হিসেবে নিয়মিত শেয়ার করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি সংগঠন ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভের মহাসচিব মুস্তফা বারঘৌতি সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের একটি ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেনকে সমর্থন করে? আর তারাই আবার এখানে দখলদারকে সমর্থন করে, কে আমাদের বিরুদ্ধে দখলদারিত্ব চালিয়ে যাচ্ছে?
• নতুন করে পুরোনো বিতর্ক
ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান ঘিরে তাদের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী নীতির অভিযোগ তোলার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বৈশ্বিক মানবাধিকারের বিষয়ে পশ্চিমাদের ‘দ্বৈত নীতি’ তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড সেই সময় আল জাজিরাকে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে দখলদারিত্ব ‘বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার আগ্রাসন আর ইসরায়েলের মধ্যে কোনও তুলনা না করেই… এটা পরিষ্কারভাবে বলা যায়, ফিলিস্তিনি জনগণ নিপীড়ক শাসনের অধীনে রয়েছে। দখলদারিত্বের শাসন এবং বর্ণবাদের শাসন।’
গত তিন দিন ধরে এক্স ব্যবহারকারীরা পশ্চিমাদের পুরোনো বক্তব্য-বিবৃতিকে নতুন করে সামনে আনছে। আর এসব বিবৃতিকে তারা ‘পশ্চিমা ভণ্ডামি’ বলে অভিহিত করছেন। গত বছরের মার্চে আইরিশ আইনপ্রণেতা রিচার্ড বয়েড ব্যারেটের করা মন্তব্যের একটি ভিডিও অনেকে শেয়ার করেছেন। ওই সময় তিনি ইউক্রেন ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে আয়ারল্যান্ড সরকারের দ্বিমুখী নীতির নিন্দা জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আপনি ভ্লাদিমির পুতিনের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বর্ণনা করার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বলিষ্ঠ ভাষা ব্যবহার করতে পেরে খুশি। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করার সময় আপনি একই ধরনের ভাষা ব্যবহার করছেন না।’
রোববার আইরিশ এই আইনপ্রণেতা আবারও ‘ইউক্রেনের প্রতিরোধকে সমর্থনকারী, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের নিন্দা জানানো পশ্চিমা নেতাদের দ্বৈত নীতিতে তিনি হতবাক বলে মন্তব্য করেছেন। তবে অনেকেই এই দুই সংঘাতের তুলনার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, হামাস এবং ফিলিস্তিনিদের এক ও একই হিসাবে দেখা উচিত নয়।
আর্সেনালের হয়ে খেলা ইউক্রেনীয় ফুটবলার ওলেক্সান্ডার জিনচেঙ্কো ইনস্টাগ্রামে পোস্টে বলেছেন, তিনি ইসরায়েলের সাথে আছেন।
বিএসডি/এমএম