নিজস্ব প্রতিবেদক
যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র আফগানিস্তানের আরও দুটি প্রাদেশিক রাজধানী তালিবান যোদ্ধাদের দখলে চলে গেছে। এর মধ্য দিয়ে মাত্র পাঁচ দিনে দেশটির ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে আটটির রাজধানী দখলে নিল সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন তালিবান বাহিনী। খবর আল–জাজিরা ও এএফপির।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা জানায়, এদিন আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ফারাহের রাজধানী ফারাহ শহর দখল করে নিয়েছে তালিবান। একই সঙ্গে এদিন গোষ্ঠীটির দখলে গেছে উত্তরাঞ্চলীয় বাঘলাম প্রদেশের রাজধানী পুল-ই-খুমরি শহরও। গুরুত্বপূর্ণ এ দুই শহরের স্থানীয় সূত্র আল–জাজিরাকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
ফারাহর প্রাদেশিক কাউন্সিলের সদস্য শাহালা আবুবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার বিকালে তালিবান যোদ্ধারা ফারাহ শহরে আক্রমণ চালায়। এ সময় আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাদের সামান্য লড়াই হয়। এরপর তালিবান গেরিলারা ফারাহ শহরে অবস্থিত গভর্নরের দপ্তর ও পুলিশ সদর দপ্তরের দখন নিয়ে নেয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আফগান সাংসদ আবদুল নাসরি ফারাহি জানিয়েছেন, তালিবান যোদ্ধারা ফারাহ প্রদেশের কেন্দ্রীয় কারাগারের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দাবি, ফারাহ আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় দ্বিতীয় প্রাদেশিক রাজধানী, এরই মধ্যে যা তালিবান বাহিনীর দখলে চলে গেছে। এর আগে গেল শুক্রবার অঞ্চলটির নিমরুজ প্রদেশের রাজধানী জারাঞ্জের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালিবান। ফারাহ দখলের মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে ইরানে প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি সীমান্ত চৌকি তালিবান যোদ্ধাদের দখলে চলে গেল।
এ দিকে মঙ্গলবার রাজধানী কাবুল থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তর দিকের প্রদেশ বাঘলানের রাজধানী শহর পুল-ই-খুমরির দখল নেয় তালিবান। স্থানীয় আইনপ্রণেতা মামুর আহমাদজাই বলেছেন, সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তখন প্রায় দুই ঘণ্টার লড়াইয়ের পর তালিবান যোদ্ধারা শহরটির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, গত পাঁচ দিনে ফারাহ, পুল-ই-খুমরি, জারাঞ্জ ছাড়াও প্রাদেশিক রাজধানী কুন্দুজ, তাকহার, সার-ই-পল, তালুকান ও সেবারঘানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালিবান গেরিলারা। ফলে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে আটটির রাজধানীতে তালিবান নেতাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলো।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আফগানিস্তানের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ৬৫ শতাংশে তালিবান বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। ফলে যে কোনো সময় আরও ১১টি প্রাদেশিক রাজধানীর পতন ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা আফগান সরকারের।
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনাবাহিনীর পুরোপুরি সৈন্য প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলো-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি সরকারকে হটিয়ে আফগানিস্তানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন তালিবান।
মূলত নিজেদের লক্ষ্য অর্জনে সরকারি সেনাদের বিরুদ্ধে তালিবান তাদের অভিযান জোরদার করেছে। তারা একের পর এক এলাকা দখলের মাধ্যমে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। ফলে যে কোনো মুহূর্তে রাজধানী কাবুলের পতন ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান এরই মধ্যে তালিবান নেতারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ কারণে দেশটিতে চলমান লড়াই-সংঘাত এখনই শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছেন না বিদেশি সাংবাদিকরা।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তানজুড়ে দুই পক্ষের লড়াই ও সহিংসতায় হাজারো বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সরকার অবিলম্বে তাদের নাগরিকদের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া ভারতও তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে এরই মধ্যে কাবুলে উড়োজাহাজ পাঠিয়েছে।
বিএসডি/এমএম