আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে কারাবন্দি নেতা ইমরান খানের মুক্তির জন্য দেশটির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কামনা করছেন তার দুই ছেলে সুলাইমান খান (২৮) এবং কাসিম খান (২৬)। সাম্প্রতিক বিরল এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন দু’ভাই।
সম্প্রতি মারিও নওফাল নামের এক নেট ইনফ্লুয়েন্সারকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সুলাইমান ও কাসিম। সাক্ষাৎকারে কাসিম বলেন, “বাবার মুক্তির জন্য আমরা আইনি পথ অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাকে কারাগার থেকে বের করার জন্য সম্ভাব্য সব পথে চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। এভাবে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস যে তাকে কারাগারে থাকতে হবে— এমনটা আমরা কখনও ভাবতেও পারিনি। যত দিন যাচ্ছে, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।”
কাসিম বলেন, “আমরা চাই এখন, এই মুহূর্ত থেকে পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকুক। কারণ বাবা বর্তমানে যে অবস্থায় আছেন, তা রীতিমতো অমানবিক। তারা তাকে মৌলিক মানবাধিকার দিচ্ছে না… তার আসলে কিছুই করছে না এবং আমরা যা চাই, তাহলো বৈশ্বিক চাপ।”
বড়ভাই সুলাইমান খান, “আমরা বহুদিন ধরে তার কারামুক্তির ব্যাপারে চেষ্টা করছি, কিন্তু কোনো চেষ্টা সফল হয়নি; সবকিছু কেমন যেন শান্ত হয়ে গেছে। এমনকি আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমও এ ইস্যুতে নিশ্চুপ।”
সম্প্রতি পাকিস্তানের সরকারকে ইমরান খানের মুক্তির জন্য পাকিস্তানের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দূত রিচার্ড গ্রেনেল। সুলাইমান এ প্রসঙ্গে বলেন, “তার সঙ্গে আমাদের এখনও যোগাযোগ হয়নি, কিন্তু তিনি যা করেছেন— সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”
“আমরা আরও কৃতজ্ঞ হবো যদি আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাই। তিনি আইনসিদ্ধভাবে বাবার কারামুক্তির একটি পথ বের করতে আমাদের সহায়তা করতে পারবেন।”
“এবং শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টই নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আমাদের অনুরোধ— পাকিস্তানকে চাপ দিন। কারণ দিনের শেষে আমরা সবাই গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে।”
প্রসঙ্গত, কিংবদন্তী ক্রিকেটার থেকে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে প্রথম ক্ষমতায় আসেন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ের পর। তবে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের শীর্ষ নির্বাহীর পদে কে আরোহন করবেন— তা নিয়ে সেনবাহিনীর সঙ্গে দন্দ্বের জেরে সংকটে পড়েন তিনি। পরে ২০২২ সালের পার্লামেন্টের বিরোধী সদস্যদের অনাস্থাভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন।
এদিকে ক্ষমতা হারানোর পরপরই একের পর এক মামলা দায়ের হতে থাকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে। সেসব মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে ২০২৩ সাল থেকে পাকিস্তানের আদিয়ালা কারাগারে আছেন তিনি।
ক্রিকেটার জীবনে ‘প্লেবয়’ ইমেজ ছিল ইমরান খানের। তবে সেই ইমেজ ঝেড়ে ফেলে রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিকে ১৯৯৫ সালে ব্রিটেনের নাগরিক জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। পরে ২০০৪ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। সুলাইমান ইসা ও কাসিম নামে এই দম্পতির সন্তান।
জেমিমার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আরও দু’বার বিয়ে করেছেন ইমরান। অন্যদিকে জেমিমা পাকিস্তান থেকে নিজের দেশ ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে পেশাদার লেখালেখি, চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র নির্মাণে মন দেন। সুলাইমান ও কাসিম তাদের মায়ের সঙ্গেই থাকেন।
প্রসঙ্গত, পিতার মুক্তির জন্য এই প্রথম প্রকাশ্য তৎপরতা দেখালেন ইমরান খানের দুই ছেলে।
সূত্র: ডন