পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে ওষুধের দাম। বাধ্য হয়েই মানুষ ঝুঁকছেন কালো বাজারের দিকে। ৩৫ বছর বয়সী ইয়াসির আলির দৈনিক আয় বাংলাদেশি ৪৪০ টাকারও কম। পেশায় দিনমজুর ইয়াসিরের মৃগী রোগ আছে, ফলে তাকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়।
ইয়াসির জানান, মৃগীরোগের ওষুধের একটি পাতার দাম বাংলাদেশি টাকায় ১০০ টাকার সমান। কিন্তু কালো বাজারে একই ওষুধের দাম প্রায় পাঁচগুণ। এর কারণ, বাজারে বর্তমানে ওষুধের চরম সংকট।
গত দুই দশক ধরে ওষুধের ব্যবসা করা খালিম আঞ্জুমও এই সংকটে আছেন অনেক দিন ধরে।তিনি জানান, কাঁচামাল কিনতে কয়েক বছর আগের তুলনায় কয়েকগুণ দাম মেটাতে হয় এখন। দাম কবে কমবে তার কোনো ঠিক নেই, জানান তিনি। আঞ্জুম আরো বলেন, এই সংকট আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।
• সংকটের সুযোগ নিচ্ছে যারা
চলমান সংকটের অন্যতম কারণ মুদ্রাস্ফীতি। ওষুধ বা ওষুধের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পাকিস্তানকে আমদানি করতে হয়। পাকিস্তানি রুপির দাম কমতে থাকায় বিদেশি ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ওষুধ কেনা পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাবেক সহকারী ড. ফয়সাল সুলতান বলেন, এখন আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে রয়েছি, যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় বা জীবনদায়ী ওষুধ বাজারে নেই বা থাকলেও খুবই কম আছে।
অনেকের মতে, এই সংকটকে আরো কঠিন করছে কিছু বিবেকহীন দালাল, যারা বেশি বেশি করে ওষুধ কিনে পরে তা চড়া দামে বিক্রি করে। এদের ‘ড্রাগ মাফিয়া’ বলা হয় পাকিস্তানে।২০২৩ সালে পাকিস্তানজুড়ে এমন বেশ কয়েকটি চোরাই ওষুধের গুদামে অভিযান চালায় পুলিশ।
• হাসপাতালে নেই প্রাণরক্ষাকারী ওষুধ
কিন্তু সবচেয়ে খারাপ সময় আসে এ বছরের এপ্রিলে। তখন পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জরুরি ওষুধের দাম ১৪ শতাংশ বাড়ায়, অন্য ওষুধের জন্য দাম বাড়ে ২ শতাংশ।
সেপ্টেম্বরে কার্যকর হওয়া এই নীতির প্রভাব পড়ে ৮০ হাজারেরও বেশি ওষুধের ওপর। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত নতুন নয়। গত পাঁচ বছরে এমনভাবে দাম বেড়েছে ১৫বার। একধাপে এতটা দাম কখনোই বাড়েনি।
আইনজীবী ও সমাজকর্মী নূর মেহেরের মতে, প্রভাব পড়ছে হাসপাতালগুলোতেও। তিনি বলেন, প্রায় একশটির কাছাকাছি প্রাণরক্ষাকারী ওষুধ পাচ্ছে না রোগীরা।
পাকিস্তানে প্রায় চার হাজার ফার্মেসির বৈধ কাগজপত্র আছে। কিন্তু ফার্মাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, প্রায় এক লাখ ব্যবসায়ী অবৈধভাবে ওষুধের ব্যবসা করছেন। পেশোয়ারের মতো শহরে অবৈধ ব্যবসায়ী বা দালালরা যে কোনো ওষুধ এনে দিতে পারে, সঠিক দামের বিনিময়ে।
কালো বাজারের রমরমার সময়ে সংকট বাড়ছে দেশের ওষুধ সংস্থাগুলোতে।সংকটের আগে পাকিস্তানে অন্তত ৬০০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানা ছিল। তবুও বিদেশি নির্ভরতা কমানো যায়নি। কারণ কাঁচামালের জন্য নির্ভর করতে হয়।
বিএসডি / জেএন