নিজস্ব প্রতিবেদক
কেউ দিয়েছেন ইট, কেউবা বালু। কেউ দিয়েছেন নগদ টাকা কেউবা দিচ্ছেন শ্রম। এভাবেই এলাকাবাসীর উদ্যোগে পাবনা জেলা শহরের প্রবেশদ্বার খ্যাত ব্যস্ততম আতাইকুলা সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। স্বতস্ফুর্তভাবে স্থানীয় লোকজন এ কাজে অংশ নিচ্ছেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে জেলা শহরে প্রবেশ আতাইকুলা সড়কটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটিকে অনেকে জেলা শহরের প্রবেশদ্বার বলে থাকেন। প্রতিদিন হাজার হাজার ছোট বড় যানবাহন সড়কটি দিয়ে চলাচল করে। এই সড়কটির দুই পাশে রয়েছে শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, একটি বৃহত কলেজ, শহর পুলিশ ফাঁড়ি, দুইটি বড় স্কুল, কয়েকটি মসজিদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
কিন্তু র্দীঘদিন মেরামত না করায় পুরো সড়কে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের বিভিন্নস্থানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টি হলেই সড়কটিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। তখন যানবাহন চলতে গেলে ঘটছে দুর্ঘটনা। কিন্তু শত দুর্ভোগের পরেও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সড়কটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছিল না। পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বার বার জানানো হলেও কোনো কর্ণপাত করেনি। ফলে শেষ পর্যন্ত এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে সড়কটি মেরামতের কাজ শুরু করেছে।
মেরামতের কাজটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সড়কের পাশের বাসিন্দা পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক সাংবাদিক নেতা আঁখিনুর ইসলাম রেমন। তিনি বলেন, ভাঙা সড়কটিতে চলতে গিয়ে মানুষ নাজেহাল হচ্ছিল। চোখের সামনে মানুষের কষ্ট দেখে আমরা নিজেরাই সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। মাত্র ৪ হাজার টাকা ও কিছু ইট বালু নিয়ে কাজ শুরু করেছি। এরপর যে যা পারে তা দিয়ে সড়ক সংস্কারের কাজে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে আমরা দুই লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছি। কাজ এখনও চলছে। অনেকে রাতের আধারে ট্রাকে করে ইট ফেলে যাচ্ছেন। পরে ফোন দিয়ে বলতেছে সামান্য কিছু ইট দিয়ে আসছি নাম প্রকাশ করব না। কাজ করেন। সামনে লাগলে আরও দেওয়া হবে।
বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১ কিলোমিটার সড়কটির আধা কিলোমিটার পুরোপুরি চলাচলের অযোগ্য। ‘ এলাকাবাসীর উদ্যোগে সড়ক সংস্কার কাজ চলছে’-এমন লেখা সাইনবোর্ড দিয়ে চলছে সংস্কার কাজ। সড়কের দুই পাশের বাসিন্দাদের অনেকেই বাড়ি ছেড়ে সড়কে এসেছেন। কেউ কাজ তদারাকি করছেন, কেউবা নিজেই কাজে লেগেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা হিমেল রানা বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য বহু তদবির করা হয়েছে। সংস্কারের দাবি এলাকাবাসী মানববন্ধন পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু কিছুতেই পৌরসভার কর্তৃপক্ষ সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। তাই তারা নিজেরাই সংস্কার কাজ শুরু করেছেন।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, সড়কটি দিয়ে সকাল বিকেল শত শত শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়। সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন মহল্লার বাসিন্দারা অফিস-আদালতে যান। অনেকে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যান। এছাড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে শত শত মানুষ এই সড়ক দিয়ে জেলা শহরে চলাচল করেন। এই সংস্কার কাজে সবাই উপকৃত হবেন।
কবিরুল ইসলাম নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, ‘ এটি একটি দারুণ উদ্যোগ। সড়কটিতে রিকশা পর্যন্ত আসতে চাইতো না। খুব ভোগান্তি হচ্ছিল। এই সংস্কারে ভোগান্তি অনেকটাই কমবে।’
পাবনা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. ওবায়দুল হক বলেন, পৌরসভা এলাকার মোট সড়কের প্রায় অর্ধেকই দীর্ঘদিন মেরামত করা হচ্ছে না। মূলত পৌরসভার অর্থাভাবেই আমরা কিছু করতে পারছি না। অর্থ বরাদ্দের জন্য চেষ্টা চলছে। অর্থ পেলেই সড়কটি কার্পেটিং করা হবে।