নিজস্ব প্রতিবেদক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, আমরা জানি পাহাড়ের জটিলতা কাটানোর এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। কিন্তু একটা কাজ তারা করতে পারেন; সেটা হলো যাদের দখলে পাহাড় চলে যাচ্ছে, তাদের নাম প্রকাশ করা। কোন ব্যবসায়ী, লুটেরা বা কোম্পানির হাতে পাহাড়ের ইজারা রয়েছে, সেগুলো প্রকাশিত হোক।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) প্রেস ক্লাবে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম এবং জনগণের অধিকার, মর্যাদা ও ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জাতির সঙ্গে বাঙালিরা শান্তিপূর্ণভাবেই সহাবস্থান করেন। সমস্যাটা তৈরি হলো তখন, যখন রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসূচি দেওয়া হলো যে সেখানে বসবাসরত জাতিদের সংখ্যালঘু বানাতে হবে। আমরা ১৯৯২ সালে বলেছিলাম, সেখানে বসবাসরত বাঙালিদের কীভাবে একটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে। নানা ধরনের সরকার ক্ষমতায় আসলেও পাহাড়ের জটিলতার সমাধান এখন পর্যন্ত হয়নি।
তিনি বলেন, সংসদে যখন উত্থাপিত হয় যে সংবিধান অনুযায়ী সবাই বাঙালি বলে পরিচিত হবে, তখন মানবেন্দ্র নারায়ণ বলেছিলেন আমরা তো বাঙালি না, এ পরিচয় আমরা কেন গ্রহণ করব। তখন শেখ মুজিব রীতিমতো তাদের ধমক দিয়ে বলেছিলেন তোমরাও বাঙালি হয়ে যাও। যা একটা ভিন্ন জাতির প্রতি অসম্মান, আর সেখান থেকেই কিন্তু জটিলতার সূত্রপাত।
আনু মুহাম্মদ বলেন,৭৫ পরবর্তী সময়ে পাহাড়ে অনেক গণহত্যা হয়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯২ সালে এসে একটি শান্তি চুক্তি হলো। কিন্তু সে চুক্তিও পাহাড়ে শান্তি আনতে পারেনি। দুটো সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি, এর মধ্যে একটি হলো ভূমি সমস্যা ও আরেকটি হলো সাংবিধানিক স্বীকৃতি। রাষ্ট্র যদি অস্তিত্বই স্বীকার না করে, তাহলে সংকট কাটবে কীভাবে?
তিনি বলেন, এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামে একটা অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসল। সেখানে নানারকম পুঁজি প্রবেশ করা শুরু করল। বিভিন্ন জনের হাতে পাহাড়ের দখল যেতে থাকল, সেনা শাসনের ফলে এসব খবরগুলো প্রকাশ পেত না। আমরা জানি যে অন্তর্বর্তী সরকারের পাহাড়ের জটিলতা কাটানোর এখতিয়ার নেই, কিন্তু একটা কাজ তারা করতে পারেন। সেটা হলো যাদের দখলে পাহাড় চলে যাচ্ছে, তাদের নামগুলো প্রকাশ করা।
আনু মুহাম্মদ বলেন,৭২ পরবর্তী সময় সংবিধানে এই জাতিগত পরিচয়ের বিষয়ে যে জটিলতা ও সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে সংবিধান কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং একই সঙ্গে এটা অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ারের মধ্যেও পড়ে। পাহাড়িদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়াটা এখন মৌলিক দাবির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করা এখন জরুরি।