নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর পূজামণ্ডপে গীতা পাঠের ব্যাখ্যা দিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মতিয়ার রহমান। গতকাল শনিবার ( ১২ অক্টোবর) তিনি এক ভিডিও বার্তায় মন্দিরে গীতা পাঠের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বাজেবামনদাহ হরিতলা পালপাড়া পূজামণ্ডপে গীতা পাঠ করেন এই জামায়াত নেতা। তার সেই গীতা পাঠের ৫ মিনিটের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর তিনি ভিডিও বার্তায় গীতা পাঠের ব্যাখ্যা দেন।
অধ্যাপক মতিয়ার রহমান জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য। তিনি ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী।
১ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিও বার্তায় অধ্যাপক মতিয়ার রহমান বলেন, প্রিয় এলাকা বাসী, আমার সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন। আমি মো. মতিয়ার রহমান, ঝিনাইদহ-৩ আসনের জামায়াত মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী। আমি গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায় যাতে করে নিরাপত্তার সঙ্গে তাদের ধর্মীয় পূজা উৎসব পালন করতে পারে তার জন্য কোটচাঁদপুর পৌরসভা ও এলাঙ্গি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে মতবিনিয়ম করতে যাই। সেখানে মানবসেবা, অমুসলিমদের অধিকার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও নির্বিঘ্নে তারা যেন পূজা অনুষ্ঠান পালন করতে পারে এই মর্মে তাদেরকে আশ্বস্ত করি। ইসলাম যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে শান্তির ধর্ম এবং গোটা মানবজাতির ধর্মীয় নাগরিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণ করে। তার স্বপক্ষে বিভিন্ন প্রকারের বক্তব্য প্রদানকালে বেদব্রহ্ম থেকেও কিছু শ্লোক পাঠ করি।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত আমার বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ প্রচার করে বিশেষ রাজনৈতিক মহল জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এ বিষয়ে অন্য কিছু ভাববার বা ভুল-বুঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই। বিদায়ের সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুই হাত তুলে আমাকে অভিবাদন জানালে আমিও দাতের দুই হাত তুলে অভিবাদন জানাই।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অধ্যাপক মতিয়ার রহমানের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি গীতা পাঠ করেন। সে সময় সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা উলুধ্বনি দেন ও শঙ্খ বাজান। গীতা পাঠ শেষে আগামীতে নির্বাচিত হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব পালনে সহযোগিতার আশ্বাস দেন অধ্যাপক মতিয়ার রহমান। তিনি জানান, তিনি একা না, তার সাথে বিএনপিও আছে।
ওই বক্তব্যের শুরুতে অধ্যাপক মতিয়ার রহমান বলেন, এই কোটচাঁদপুরে আলো বাতাস, মাটি ও মায়া মমতাই বেড়ে উঠেছি। ইসলামী আদর্শের একজন ব্যক্তি হলেও আমার ভেতরে একজন ভালো সনাতনী হিন্দু ব্রাহ্মণ, একজন ভালো খ্রিস্টিয়ান ও একজন ভালো মুসলিমও বাস।
তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্য বলেন, বিশ্বাস করুন হিন্দু ধর্মের আবির্ভাব হয়েছে মুসলমানদের কোরআন পাওয়ারও সাড়ে ৪ হাজার বছর পূর্বে। এই জাতিটা বাস করতো ভারতের কালীকোটের মালমল সিন্দুর হ্রদের অববাহিকায়। আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত ওরা ওখানে বাস করতো।