আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চলতি বছরে জুলাই মাস ছিল পৃথিবীতে এযাবৎকালের রেকর্ড হওয়া সর্বোচ্চ উত্তপ্ত মাস। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বৈজ্ঞানিক ও নীতিনির্ধারণী সংস্থার এক প্রতিবেদন বলছে, সমুদ্র ও ভূপৃষ্ঠ মিলিয়ে গত মাসের বৈশ্বিক তাপমাত্রা ছিল বিংশ শতাব্দীর গড় ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৬০ দশমিক ৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) চেয়ে ০.৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ১৪২ বছর আগে হিসাব রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই মাসিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।
শনিবার (১৪ আগস্ট) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে, ২০১৬ সালের জুলাই পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ উষ্ণ মাসের রেকর্ড গড়েছিল। পরে ২০১৯ ও ২০২০ সালেও একই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়, তবে এ বছরের জুলাই সেটিকেও ছাড়িয়ে গেল। বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের ফলে এমনটি হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন (এনওএএ) বলেছে, জুলাইয়ের ‘অনিবার্য পার্থক্য’ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনএওও’র প্রশাসক রিক স্পিনরাড বলেন, এক্ষেত্রে প্রথম হওয়াটাই সবচেয়ে খারাপ। নতুন এ রেকর্ড বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরক্তিকর ও বিঘ্নসৃষ্টিকারী পথ তৈরি করেছে।
এনএওও’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জুলাইয়ে ভূ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের সমন্বিত তাপমাত্রা ছিল ২০১৬ সালের রেকর্ডের চেয়ে ০.০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এসময় উত্তর গোলার্ধে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ‘অভূতপূর্ব’ গতিতে গড়ের চেয়ে ১ দশমিক ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে, যা ২০১২ সালের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।
তথ্য বলছে, গত জুলাই ছিল এশিয়ার ইতিহাসে সর্বকালের সর্বোচ্চ আর ইউরোপের জন্য ২০১৮ সালের জুলাইয়ের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উষ্ণতম মাস।
এর আগে, চলতি সপ্তাহেই জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব নিয়ে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্ব উত্তপ্তকারী বিপজ্জনক গ্যাস নির্গমন অব্যাহত থাকলে চলতি শতাব্দীর শেষ দিকে সামুদ্রিক পানির উচ্চতা দুই মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
জাতিসংঘের মহাসচিব এটিকে ‘মানবতার জন্য লাল সংকেত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা যদি এখনই সব শক্তি একত্রিত করি, তাহলে জলবায়ু বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। প্রতিবেদন এটি পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, দেরি করার মতো সময় নেই আর কোনো অজুহাতেরও জায়গা নেই।
জাতিসংঘের বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আগে ১০০ বছরে জলবায়ুর যে পরিবর্তন হতো, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রতি ছয় থেকে নয় বছরে তা ঘটবে। এই শতাব্দীজুড়ে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে জলস্তর বাড়বে, ভাঙন দেখা দেবে, অনেক শহর পানিতে তলিয়ে যাবে।
বিএসডি/এমএম