বেনাপোল প্রতিনিধি:
পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ঈদের ছুটিতে এবং চিকিৎসার জন্য অনেকে গিয়েছিলেন ভারতে। ভ্রমন ও চিকিৎসা শেষে তারা এখন দেশে ফিরছেন।
চিকিৎসা, বেড়ানো, ব্যবসা, শিক্ষা প্রভৃতি উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিদিনই মানুষ যাচ্ছেন ভারতে। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে হচ্ছে বেনাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে।
অপর দিকে বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে কাজের ধীরগতির কারনে পাসপোর্ট যাত্রীরা নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ইমিগ্রেশন অভ্যন্তরে ডেস্কের সংখ্যা বেশি থাকলে ৩-৪ জন অফিসার কাজ করছেন। যাত্রীরা ভোর ৬টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়ে বিকালে এমনকি রাত ১১ টা পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে দেশে আসতে। আবার গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রী যাতায়াত করায় বাড়ছে নিরাপত্তা ঝুঁকিও। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। প্রতিনিয়ত ঘটছে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
এদিকে, পেট্রাপোল বন্দরে কুলি ও দালালদের বিরুদ্ধে জনপ্রতি যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সিরিয়াল ভঙ্গ করে আগে আগে ইমিগ্রেশন পার করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বন্দরে বিএসএফের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
ভারতে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরা যাত্রী কুমিল্লার জীবন কুমার বলেন, আমরা শুক্রবার (২২ জুলাই) সকাল ৯টায় পেট্রাপোলে এসে পৌঁছাই। সেখানে সোহাগ পরিবহণে করে আসি। তারাও আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেবাটা দেয়নি। নোমান্সল্যান্ডে আমাদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। সোহাগ পরিবহণের ওপাশের দায়িত্বে থাকা স্টাফ এবং কুলিরা আগে আগে ইমিগ্রেশন পার করে দেয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ১০০০ টাকা করে নিয়েছেন। তবুও তারা কিছুই করেননি, শুধুমাত্র আমাদের মালামালটা বহন করে দিয়েছেন। অন্যদিকে, বিএসএফ সদস্যদের দুর্ব্যাবহারের শিকার হতে হয়েছে।
জানা যায়, দেশের অন্য শুল্ক স্টেশন দিয়ে যাত্রী যাতায়াত বন্ধ থাকায় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে গমনাগমন বেড়ে গেছে। ভারত থেকে ফিরে আসা জবেদা বেগম, নাঈমুল ও আনোয়ার হোসেন জানান, পরিবার পরিজন নিয়ে ভারত ভ্রমণে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই মাত্রার দুর্ভোগ আগে কখনো পোহায়নি।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা জানান, ভারতের পেট্রাপোলে ইমিগ্রেশনে ধীরগতি-নেট সমস্যাসহ দালাল চক্রের কারণে যাত্রী ভোগান্তি বাড়ছে। প্রশাসনের মারমুখী আচরণের অভিযোগ করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি নিয়ে ভ্রমণে এসেছি। কেন আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হবে। তারা আরো জানিয়েছেন, সীমান্তে বিভিন্ন বাহিনী দায়িত্ব পালন করলেও যাত্রীদের লাইনে কোন শৃঙ্খলা ছিল না। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে খেয়ে না খেয়ে। এটা ছিল এক অমানবিক পরিস্থিতি। বাংলাদেশে প্রবেশের পৱ গন্তব্যে যেতে ছিল টিকিট সংকট। টিকিট কোন রকমে মিললে ও বেশি দাম দিয়ে তা কাটতে হয়েছে। নন এসি বাসে ৫০০ টাকার টিকিট কিনতে হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়। এসি বাসের হাজার ১২শর টিকিট কিনতে হচ্ছে ১৫০০-২০০০ টাকায়।
ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রী অরবিন্দ জানান, ভোর ৫টার সময় ভারতের অফিসের লাইনে দাঁড়িয়ে বিকাল ৪টায় বাংলাদেশে এসেছি। এখানে সময় লেগেছে ১০ মিনিট।
অপর যাত্রী কল্পনা রানী জানান, পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পরে ফিরে গেছি। আজ ভোরে লাইনে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি।
ভারত ফেরত যাত্রী নাহিদা বেগম জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়। শত কষ্ট আর দুর্ভোগ পোহায়ে দেশে এসে দেখছি বাসের টিকিট হয়ে গেছে সোনার হরিণ।টিকিট মিল যদি ও হচ্ছে আগের থেকে ভাড়া এখন অনেক বেশি।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, বাংলাদেশ অংশে যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। রাতদিন যাত্রীসেবা বাড়ানো হয়েছে। ভারতীয় কতৃর্পক্ষের সঙ্গে সমস্যা সমাধানে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। ওসি ইমিগ্রেশন আবুল কালাম আজাদ জানান, বেনাপোল দিয়ে যাত্রীসেবায় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। গভীর রাত পর্যন্তও খোলা রাখা হয়েছে ডেক্স। বাড়ানো হয়েছে সেবা। বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি কামাল ভুঁইয়া জানান যাত্রী নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সেবায় কাজ করছেন প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা।
বিএসডি/ এমআর