প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য দক্ষ জনশক্তির কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, যথাযথ প্রশিক্ষণ পেলে আমাদের অভিবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে আরও বড় অবদান রাখতে পারবে।
শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন ।
ড. মোমেন বলেন, ‘অভিবাসন প্রক্রিয়াকে নিরাপদ ও স্বচ্ছ করে তুলতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরাপদ অভিবাসনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিবাসনে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অভিবাসন সংক্রান্ত নতুন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে আগ্রহীদের প্রতিযোগিতাপূর্ণ আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের উপযুক্ত দক্ষ করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ চলমান রয়েছে।’
বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে চূড়ান্তভাবে উত্তরণ করবে। সে সময়ে আমাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজন হবে দক্ষ জনশক্তির। এজন্য বর্তমান সরকার শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে, যোগ করেন মোমেন।
সরকারের দেশের প্রতিটি উপজেলা থেকে বছরে গড়ে এক হাজার কর্মীর কর্মসংস্থানে কাজ করছেন জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের সরকার বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা থেকে বছরে গড়ে ১ হাজার কর্মীকে বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এ লক্ষ্য অর্জন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ, এনজিও, সুশীলসমাজসহ সব অংশীজনকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে সেগুলো সবার আন্তরিক সহযোগিতা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে অতিক্রম করা সম্ভব বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
ড. মোমেন বলেন, ‘বিদেশে বর্তমান শ্রমবাজারগুলো সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ, নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি এবং সর্বোপরি অভিবাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। অভিবাসীদের কল্যাণ এবং করোনা মহামারির কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতকে স্থিতিশীল রাখা এবং পুনরায় বেগবান করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে বদ্ধ পরিকর হয়ে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে।’
নিরাপদ অভিবাসনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মোমেন বলেন, ‘অভিবাসীদের কল্যাণসাধন ও প্রবাসীদের কর্মসংস্থানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো সব ধরনের কূটনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে এবং এ লক্ষ্যে সামগ্রিকভাবে কাজ করছে। নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক, নৈতিক ও নিয়মিত অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
বর্তমানে বিশ্বের ১৭৪টি দেশে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী কর্মরত রয়েছে বলেও জানান মোমেন।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দিয়ে গিয়েছেন একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের মহাসড়কে আরোহণে আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ অগ্রযাত্রায় অভিবাসী কর্মীদের অসামান্য অবদান রয়েছে। মূল্যবান রেমিটেন্স প্রেরণ করে তাঁরা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভকে শক্তিশালী করেছেন।
বৈদেশিক কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতি উপজেলা হতে প্রতিবছর গড়ে এক হাজার কর্মী বিদেশে প্রেরণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করছে । মন্ত্রণালয়ের অব্যাহত প্রচেষ্টার কারণে কোভিড -১৯ পরিস্থিতিতেও ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ৫ মাসে আড়াই লক্ষাধিক কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে ।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মোঃ শহীদুল আলম (এনডিসি) বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন। দেশের যুবক শ্রেণী যদি বেকার থাকে, তারা যদি চাকরি না পায় তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা পরিপূর্ণতা পাবে না। আজকে আমরা বলতে চাই জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে অভিবাসনকে গুরুত্ব দিতেই হবে। যথাযথ প্রশিক্ষণ পেলে আমাদের অভিবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারবে।
বিএসডি/এসএফ