নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু পরিবার ও সাধারণ ভোটারদের ওপর হামলা, মারধর, মাছের ঘের দখল, ভাঙচুর ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে সদ্য বিজয়ী বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলেন ওই আসনের মিঠাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উৎপল কুমার মণ্ডল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনার পর থেকেই বাগেরহাট-৩ আসনের বিশেষ করে পুরো মোংলা উপজেলায় ত্রাসের রাম রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন নবনির্বাচিত এমপি হাবিবুন নাহারের কতিপয় নেতা ও ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা। তাদের ধারাবাহিক অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার, হামলা, মারধর, মাছের ঘের দখল, ভাঙচুর ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে এলাকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন জিম্মি হয়ে পড়েছে। অবরুদ্ধ হয়ে বন্দি জীবন যাপন করছেন বিপুল সংখ্যক হিন্দু পরিবার। ইতোমধ্যে কয়েকশ পরিবার ভয়ে আতঙ্কে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে মোংলা থেকে পালিয়ে অন্যত্র বসবাস করছে। শুধুমাত্র হাবিবুন নাহারকে ভোট না দেওয়ার কারণে এ এলাকায় বর্তমানে এক অস্থিতিশীল ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে।
বিগত ৩ বারের সংসদ নির্বাচনে এখানে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় হাবিবুন নাহার অনেক সহজেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এবার দলীয় কোনো বাধা না থাকায় বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও মোংলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় হাবিবুন নাহারকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে জয়ী হতে হয়। নির্বাচনের শুরু থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলীর সমর্থক বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কর্মী ও নেতাদের ওপর হাবিবুন নাহারের লোকজন নানাভাবে হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নির্বাচনের দিন থেকেই। ভোট গণনা শেষ হতেই হাবিবুন নাহারের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী ইদ্রিস আলীর সমর্থক হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা কর্মীদের টার্গেট করে করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা ও মারধর চালানো হয়। ভাঙচুর চালায় বসত ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানে। জবর দখল করে নেওয়া হয় মাছের ঘের। লুটে নেওয়া হয় পুকুর ও ঘেরের মাছ। বর্তমানে এদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না বাড়ির শিশু থেকে বৃদ্ধ নারীরা পর্যন্ত। রাতে দিনে সমানতালে এমপির ক্যাডার বাহিনী বেপরোয়া তাণ্ডব চালাচ্ছে। শুধুমাত্র হাবিবুন নাহারকে ভোট না দেওয়ার কারণে ক্যাডার বাহিনী প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে এলাকায় চালাচ্ছে সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব।
মোংলা উপজেলার সোনাইলতলা, মিঠাখালী, সুন্দরবন ও চিলা ইউনিয়নে হাবিবুন নাহারের ক্যাডার বাহিনী সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে মোংলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার, সুন্দরবন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কবির হোসেন ও তার সহযোগী আহাদুল মেম্বর, মিঠাখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ইস্রাফিল হাওলাদার, চিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী আকবর হোসেন, চাঁদপাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ভাই হাফিজুল ও তার সহযোগী সেলিম। এরা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ দলের স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতা ও কর্মী। এদের ইন্ধনেই ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর নানা পন্থায় নির্যাতন ও জুলুম চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে চেয়ারম্যান উৎপল কুমার মন্ডল বলেন, আমরা ক্যাডার বাহিনীর তাণ্ডব থেকে পরিত্রাণ পেতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সেই সঙ্গে এসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপের হোতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি দলীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— বিধান চন্দ্র রায়, বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উদয় শংকর বিশ্বাস, নির্যাতনের শিকার এলাকাবাসী পিন্টু রায় নয়ন কুমার মন্ডল প্রমুখ।
বিএসডি / এলএম