নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তর সরবরাহ করছে একটি চক্র। এই চক্রের ১০ সদস্যকে রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও ও কাকরাইল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
শনিবার দুপুরে ফাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব কথা জানান। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বরখাস্ত সরকারি কর্মকর্তা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
মহাহিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের (সিজিএ) বরখাস্ত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আজাদ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা নাসরীন রুপার যোগসাজশে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিল।
সবশেষ শুক্রবার বিকালে অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে চক্রটি। এ ঘটনায় জড়িত চক্রের সাত সদস্য ও তিন পরীক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি গুলশান বিভাগ।
গ্রেফতাররা হলেন-নোমান সিদ্দিকী, মাহমুদুল হাসান আজাদ, আল আমিন রনি, নাহিদ হাসান, শহীদ উল্লাহ, তানজির আহমেদ, মাহবুবা নাসরীন রুপা, রাজু আহমেদ, হাসিবুল হাসান ও রাকিবুল হাসান।
এসময় তাদের কাছ থেকে ইয়ার ডিভাইস ৬টি, মাস্টার কার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ৬টি, ব্যাংকের চেক ৫টি, নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ৭টি, স্মার্ট ফোন ১০টি, ফিচার ফোন ৬টি, প্রবেশপত্র ১৮টি এবং ফাঁস হওয়া ৩ সেট প্রশ্নপত্র জব্দ করা হয়।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের অধীনে ৫৫০টি অডিটর পদে নিয়োগের জন্য শুক্রবার দুপুর ৩টা থেকে বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ৭০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এনএসআই ও ডিবি গুলশান বিভাগ গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে জানতে পারে, একটি চক্র এই নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ও জালিয়াতির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত। পরে রাজধানীর মিরপুর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, চক্রটির একটি গ্রুপ পরীক্ষার আগে থেকে পরীক্ষার্থী সংগ্রহ ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়। টার্গেটকৃত পরীক্ষার্থী প্রতি ১৪ থেকে ১৬ লাখ টাকার লিখিত চুক্তি হয় তাদের। এমসিকিউ পরীক্ষার আগে কিছু টাকা আদায় করা হয় এবং বাকি টাকা নিয়োগের পরে দেওয়ার চুক্তি হয়।
আরেকটি গ্রুপ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ইয়ার ডিভাইস, মাস্টার কার্ড মোবাইল সিম হোল্ডার ও বাটন মোবাইল টার্গেটকৃত পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করে। পরীক্ষা শুরুর ২/৩ মিনিটের মধ্যেই প্রশ্নফাঁস করে বাইরে পাঠানো হয় ডিভাইসের মাধ্যমে। বাইরে থেকে প্রশ্নপত্রের সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে ফের পাঠানো হয় পরীক্ষার্থীদের কাছে।
গ্রেফতার মাহমুদুল হাসান আজাদ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ২০১৯ সালে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। নাহিদ হাসান, আল আমিন সিদ্দিকী আগেও প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ২০১৩, ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
ইতোপূর্বে বিভিন্ন ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন অধিদফতর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়, জ্বালানি অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, খাদ্য অধিদফতর, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থার প্রশ্নপ ফাঁস এবং উত্তরপত্র সরবরাহ করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, কোনো সংস্থাই চায় না পরীক্ষা বিতর্কিত হোক। পরীক্ষা বাতিল হবে কিনা তা সংশ্লিষ্ট দফতরই সিদ্ধান্ত নেবে।
শুক্রবারের নিয়োগ পরীক্ষায় ১৮ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত তদন্তে ৯ শিক্ষার্থীদের ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রের উত্তর সরবরাহের তথ্য মিলেছে। এই চক্রের সঙ্গে আরও যারা জড়িত রয়েছে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিএসডি/ এলএল