নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে বেসরকারি হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটি।
সমাবেশ থেকে সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। সিআরবির বাইরে চট্টগ্রামের অন্যত্র সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণেরও দাবি জানানো হয়েছে।
শনিবার (২৮ আগস্ট) সিআরবির সাত রাস্তার মোড়ে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সিপিবি নেতারা বলেন, সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প বাতিলের দাবি আজ চট্টগ্রামের আপামর মানুষের দাবিই শুধু নয়। এই দাবি সারাদেশের সকল বিবেকবান মানুষের। বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাঙালিরাও এই দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে।
নেতারা বলেন, আমাদের দাবি একেবারেই সুনির্দিষ্ট- সিআরবিতে কোনো হাসপাতাল করা যাবে না। সিআরবির বাইরে চট্টগ্রামের অন্য যেকোনো স্থানে আধুনিক মানসম্মত একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে এবং চট্টগ্রামের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলো আধুনিকায়ন করতে হবে। সিপিবি চট্টগ্রামে আর বিত্তবানদের প্রাইভেট হাসপাতাল চায় না।
সিপিবি চায় গরিব-শ্রমজীবী মানুষের জন্য সরকারি উদ্যোগে আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা। কারণ, গরিব-শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের লক্ষ লক্ষ টাকা বিল দিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই।
সিপিবি নেতারা বলেন, সিআরবিতে হাসপাতালের বিরুদ্ধে সিপিবিসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং আপামর মানুষ প্রায় দুইমাস ধরে আন্দোলন করে আসছে। চট্টগ্রামে এত মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, এত জনপ্রতিনিধি- কেউ এই দাবির পক্ষে জোরালো কোনো অবস্থান নেননি। সিআরবি ইস্যুতে মন্ত্রী-এমপিদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারি দলের নেতারা শুধু একটাই কথা বলে- প্রধানমন্ত্রী জানতে পারলে প্রকল্প বাতিল করবেন। দুইমাস ধরে আন্দোলনের খবর কি প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছায়নি? আর কী করলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই দাবি পৌঁছাবে?
তারা বলেন, আমরা সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই- দেশে আজ হাজার হাজার লুটেরা দস্যু তৈরি হয়েছে। বাইশ পরিবারের স্থান দখল করেছে বাইশ হাজার লুটেরা দস্যু। এই লুটেরারা এখন সিআরবি ধ্বংস করতে চায়। চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সকল স্থান তারা ধ্বংস করেছে। উন্নয়নের নামে একের পর এক ধ্বংস করা হয়েছে চট্টগ্রামের প্রাণ-প্রকৃতি। এই শহরে এখন আর নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা নেই। এই লুটেরা দস্যুদের লাগাম টানুন। ইউনাইটেড গ্রুপকে বলব- আপনারা সিআরবি থেকে হাত গুটান। চট্টগ্রামের জনগণ তাদের ফুসফুস ব্যবহার করে আপনাদের ব্যবসা করতে দেবে না। এখনও সময় আছে।
সিপিবি নেতারা আরও বলেন, সরকারকে বলব, কর্তৃত্ববাদী একগুঁয়ে আচরণের ফল ভালো হবে না। অবিলম্বে সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্প বাতিল করে সিআরবির বাইরে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দিন। না হলে সিপিবি চট্টগ্রামের জনগণকে নিয়ে ঘেরাও-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। জনতার দাবি আমরা আদায় করেই ছাড়ব।
সমাবেশ শেষে লাল পতাকা সহকারে একটি বিক্ষোভ মিছিল সিআরবিসহ আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবারও সাত রাস্তার মোড়ে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবি চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল নবী। সম্পাদকমণ্ডলীর নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মো. শাহ আলম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক অশোক সাহা, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মছিউদদৌলা, মো. জাহাঙ্গীর, অমৃত বড়ুয়া, প্রমোদ বরণ বড়ুয়া, নারী সেলের আহ্বায়ক রেখা চৌধুরী, বোয়ালখালী থানার সাধারণ সম্পাদক সেহাব উদ্দিন সাইফু, সীতাকুণ্ডের সহ-সম্পাদক জামাল উদ্দিন, যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদুল সামির, ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী প্রমুখ।
বিএসডি/এমএম