নিজস্ব প্রতিবেদক
প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে ২০০২ সালে আইন প্রণয়ন হলেও গত ২২ বছরে এখন পর্যন্ত সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত হয়নি। এর ফলে সুযোগ-সন্ধানীদের তৎপরতা ও নানাবিধ কারণে সমাজে প্লাস্টিক ব্যবহারের অভ্যাসটি এখন নেশায় পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলছেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে একদিকে যেমন আইনের প্রয়োগ জরুরি, অন্যদিকে নিজেদেরকে সচেতন করে তোলাটাও গুরুত্বপূর্ণ। প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে বিকল্প গড়ে উঠবে এবং বেসরকারি খাত সেই বিকল্প পণ্য ব্যবহারে বাধ্য হবে।
সোমবার (৪ নভেম্বর) মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ওয়ার্ল্ড সিটিস ডে উপলক্ষ্যে ব্র্যাক আয়োজিত ‘প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস, জাতীয় নীতি ও টেকসই পদক্ষেপ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, আমরা যে প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দিচ্ছি, সেটি আগামী ৪০০ বছরেও ধ্বংস হবে না। ২২ বছর আগে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এতোদিন পর এসে যখন বলা হয় বিকল্প নেই, সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে সরকার সব রকমের সহায়তা দেবে কিন্তু সাজিয়ে-গুছিয়ে বিকল্প তৈরি করে দেবে না।
তিনি বলেন, আমরা সকলেই আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের রক্ষক। প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে আমরা সকলের প্রতি আহ্বান জানাই।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, সস্তা হওয়ায় প্লাস্টিকপণ্য অনেক বেশি পরিমাণে ব্যবহার হচ্ছে। কেনাকাটার সময় সচেতনতার অভাবে অনেকে সস্তা ব্যাগ হিসেবে প্লাস্টিককেই প্রাধান্য দেয়। পরিবেশ সচেতন হতে হলে যে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে, সেটি তারা করতে চান না। এ ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বিরূপ প্রভাব বিষয়ে গণসচেতনতা সেভাবে তৈরি হয়নি।তিনি আরও বলেন, প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধে শুধু বিকল্প পণ্যই যথেষ্ট নয়, সেই বিকল্পটি হতে হবে ব্যয় সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য যেন এটি ব্যবহারের ফলে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে না যায়। মূল্য বেশি হলে মানুষ সেটি গ্রহণ করবে না। ফলে এ জায়গাতে আরও বেশি উদ্ভাবনী হতে হবে এবং প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে।
অনুষ্ঠান মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের ক্লাইমেট চেঞ্জ, আরবান ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্টের পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনার ভিত্তিতে আমাদের লক্ষ্য হল ২০২৫ সালের মধ্যে পঞ্চাশ ভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্যতা অর্জন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন ৩০ শতাংশ হ্রাস করা। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া, ক্রেতা-ভোক্তাদের আচরণ এবং সামগ্রিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই এ দেশে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্যের মূল কারণ। এই প্লাস্টিক সংকট মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ মানুষের সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেসের ঊর্ধ্বতন পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, নেসলে বাংলাদেশের কোম্পানি সেক্রেটারি এবং হেড অব লিগ্যাল অ্যান্ড ট্যাক্সেশন, দেবব্রত রায় চৌধুরী, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)-এর ইকোলজিস্ট অ্যান্ড সোশ্যাল জাস্টিজ অ্যাডভোকেট ড. শাহরিয়ার হোসেনসহ আরও অনেকে।