নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা মহানগরীর ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত রাখতে এবং পথচারীদের চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। গুলশাল, বনানী, বারিধারার মতো এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও উন্নয়নের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট মেয়রকে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলন, কোনো প্ল্যান করার সময় ফুটপাতটা যেন মানুষের হাঁটার যোগ্য থাকে। ফুটপাত যেন দখল না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিয়েই করতে হবে। তিনি বলেন, আর কাউকে দোষ দেব না, আমাদের প্ল্যান করার সময়ই এ সর্বনাশটা করা হয়। এটাকে তিনি ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলেও উল্লেখ করেন। ঘনবসতিপূর্ণ হরিরামপুর একসময় অত্যন্ত অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার মান আরও উন্নত হবে এবং মানুষ স্বাস্থ্যকরভাবে বসবাস করতে পারবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরটাকে সীমিত শক্তি দিয়ে যতদূর সম্ভব আধুনিকায়ন করা, সবুজায়ন ও বসবাসের উপযোগী করার চেষ্টা করছি। নতুন ইউনিয়নগুলো যুক্ত করার মাধ্যমে ১৮টি ওয়ার্ড করেছি। তিনি বলেন, এখানে খেলার মাঠ, পাবলিক টয়লেটসহ নানা নাগরিক সুবিধা সৃষ্টির জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে এ নতুন ঢাকা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কেননা এ কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নও তার হাতেই সৃষ্টি এবং যখনই তাদের কোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তারা তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তারা জনগণের পাশে থেকে সেবা করে যাচ্ছেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রকল্পের ওপর ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’ উপস্থাপন করেন ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম জাকারিয়া হোসেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
বিভিন্ন খাল পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ নেওয়ায় ডিএনসিসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অতীতে বক্সকালভার্টগুলো নির্মাণ করায় আসলে সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়েছে। খালগুলোর দুপাশে রাস্তা করা যেত। পিলার দিয়ে ওপর দিয়েও এলিভেটেড রাস্তা করা যেত। কিন্তু বক্সকালভার্ট করার ফলে সেখানে যেমন ময়লা জমছে, তেমনই জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেক স্থানে এজমালি সম্পত্তির মতো খাল দখল হয়ে ঘরবাড়ি বা স্থাপনা বা দোকানপাট তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের যেমন রক্ত প্রবাহের জন্য ধমনি থাকে, একটি শহরেরও তেমনই শিরা বা ধমনি হিসাবে কাজ করে এ খালগুলো। কাজেই সেটা উদ্ধার করা একান্ত অপরিহার্য। ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, শুরুটা আমরা করেছিলাম।
কিন্তু মাঝে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সেগুলোকে এমনভাবে লুটেপুটে খেল যে, একটি বিল্ডিংও খাড়া হয়ে দাঁড়াতে পারল না। তখনকার বিএনপির সিটি মেয়র এবং সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে পুরো প্রকল্পের বারোটা বাজিয়ে দেয়।
ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তার সরকার দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করতে ‘ব্লু-ইকোনমির’ সম্ভাবনা অন্বেষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে আমাদের সমুদ্র সম্পদের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ‘ব্লু- ইকোনমি’ নীতিমালা ঘোষণা দিয়েছি এবং এ সম্পদ ব্যবহার করে আমাদের অর্থনীতিকে যেন আরও গতিশীল করতে পারি, শক্তিশালী করতে পারি, মজবুত করতে পারি-এজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। রোববার সকালে মেরিন ফিশারিজ একাডেমির ৪১তম ব্যাচ ক্যাডেটদের ‘মুজিববর্ষ’ পাসিং আউট প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রামের মেরিন ফিশারিজ একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
আমাদের বঙ্গোপসাগর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে যে বিশাল সম্পদ রয়েছে সেই সম্পদ আমাদের আহরণ করতে হবে। এখানে যেমন মৎস্য সম্পদ আছে, তেমনই অন্যসব সামুদ্রিক সম্পদও আছে। সেগুলো আহরণ করে আমরা আরও আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারব-এটাই আমি আশা করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাছে-ভাতে বাঙালি। কাজেই মাছ আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। যে সম্পদ আমাদের শুধু পুষ্টি জোগায় না, সে সম্পদ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করেও আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। সেজন্য মৎস্য উৎপাদনের আমরা গবেষণা করে যাচ্ছি এবং অনেক সাফল্যও পেয়েছি। কিন্তু সমুদ্রসম্পদ আহরণে আমাদের এখনো অনেক কাজ করতে হবে এবং আমরা সেটা করব বলেই বিশ্বাস করি।
এ বছর একাডেমির ৪১তম ব্যাচে নটিক্যাল বিভাগে ৩৩ জন, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৩১ জন এবং মেরিন ফিশারিজ বিভাগে ২০ জন ক্যাডেটসহ ৮৪ জন নারী ও পুরুষ ক্যাডেটের পাসিং আউট হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম কৃতী ক্যাডেটদের মাঝে পদক বিতরণ করেন। এইচএম বেনজীর আহমেদ সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী চৌকশ ক্যাডেট হিসাবে ‘বেস্ট অলরাউন্ডার গোল্ড মেডেল’ লাভ করেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে মেরিন ফিসারিজ একডেমির কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়।
বিএসডি/ এফএস