নিজস্ব প্রতিনিধি:
ফেনীতে মন্দির ও হিন্দুদের দোকানপাটে হামলা ও লুটপাটের সময় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ এক যুবকের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে।
ঢাকার কাকরাইল ইসলামিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে নামুল হক কাউছারের (১৯) মৃত্যু হয় বলে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম জানান।
নিহত কাউছার ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভোয়াগ গ্রামের ব্যবসায়ী একরামুল হক সবুজের ছেলে।
দুর্গাপূজা চলাকালে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে শুরু সহিংসতা শুরুর পর তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়।
এর প্রতিবাদে ১৬ অক্টোবর (শনিবার) ফেনীতে পূজা উদযাপন পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে হামলা হয়। জেলা শহরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় হামলাকারীরা।
এরপর কয়েকটি মন্দির এবং হিন্দুদের মালিকানাধীন বেশ কিছু দোকানপাটে ভাঙচুর, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয় সেই রাতে। সাত ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে সংঘর্ষে ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিনসহ ৪০ জন আহত হন।
নিহতের চাচা আতাউল ইসলাম জানান, গত ১৫ অক্টোবর দোকানের মালামাল কিনতে কাউছার ফেনী শহরে যায়।ওই দিন বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে জেলার বড় জামে মসজিদের সামনে কাউছার গুলিবিদ্ধ হয়।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ফেনী শহরের একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি নিয়ে যায়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে কাউছারের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার ভোরে তাকে ঢাকায় নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়।
শুক্রবার রাতে কাউসারের লাশ সোনাগাজী পৌর শহরের কাশ্মির বাজার সড়কের ভাই ভাই মঞ্জিলের বাসায় আনা হলে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
আতাউল বলেন, শনিবার সকাল ৯টায় সোনাগাজী পৌর শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কাউছারের প্রথম নামাজে জানাযা ও সকাল ১০টায় ভোয়াগ গ্রামে দ্বিতীয় জানাযা শেষে আবদুর রাজ্জাক মাস্টার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।
পুলিশ মরদেহ নিয়ে যাওয়ায় ওই সময়ে জানাযা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
ওসি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মৃত্যুর কাউসারের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরে ও স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ রাতেই তার বাড়িতে যায়।
পরে গভীর রাতে কাউছারের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ-র্যাব ও মন্দির কমিটির দায়ের করা পৃথক চার মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে মোট ৬৫৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। থানা পুলিশ, র্যাব ও সিআইডি পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার দিন রাত থেকে ২৯ অক্টোবর শুক্রবার রাত পর্যন্ত গত ১৫ দিনে হামলায় জড়িত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে।
এদের মধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে রবিউল হক (৩০), তৌহিদুল ইসলাম জিদান (১৬), গোলাম মোরশেদ খাঁনসহ (২০) ৪ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ছয় আসামি রিমান্ডে রয়েছে।
বিএসডি / আইকে