সেমিফাইনালেই কি ‘ফাইনাল’ দেখা হয়ে গেল?
রজার ফেদেরার আগেই সরে দাঁড়িয়েছেন। টেনিসের ‘বিগ থ্রি’-র মধ্যে বাকি যে দুজন-রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচের লড়াইটা হয়ে গেল কাল।
চোখধাঁধানো সেমিফাইনালের সে লড়াই জোকোভিচের কাছে ‘প্যারিসে আমার সেরা ম্যাচ।’ ম্যাচের স্কোরকার্ডও জোকোভিচের এই কথার পক্ষে।
লাল দুর্গে প্রথম সেটে হেরেও সেখানকার অবিসংবাদিত ‘রাজা’ নাদালকে ৩-৬, ৬-৩, ৭-৬ (৭/৪), ৬-২ গেমে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছেন র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা সার্বিয়ান তারকা।
নাদাল ফ্রেঞ্চ ওপেনে ১৩ বারের চ্যাম্পিয়ন। রোলাঁ গারোঁর লাল মাটির কোর্টে ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ১০৮ ম্যাচে কাল দেখেছেন তৃতীয় হার-তাতে ২১তম গ্র্যান্ড স্লাম জিতে ছেলেদের এককে নাদালের রেকর্ড গড়ার অপেক্ষা আরও বাড়ল।
৪ ঘণ্টা ১১ মিনিট লড়ে এ হার স্প্যানিশ তারকাকে কষ্ট দিলেও তা শুধু টেনিসের একটি ম্যাচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলেন তিনি, ‘আমার জন্য এটি ছিল বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ টুর্নামেন্ট। তাতে হেরে খারাপ তো লাগছেই। কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। টেনিস কোর্টে এটি স্রেফ হার ছাড়া আর কিছুই না।’
খেলাকে খেলার জায়গাতেই রেখে ৩৫ বছর বয়সী নাদালের উপলব্ধি, ‘সবকিছু ঠিক থাকলে কাল আমি বাসায় আমার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে থাকব। পরে কী হয় তা দেখা যাবে।’
রোঁলা গারোঁয় আগামী বছরও ফিরতে চান তিনি। কিন্তু বয়স ক্রমেই তাঁর পক্ষ থেকে সরে যাচ্ছে। এক দশক আগের নাদাল এবং বর্তমান নাদালের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। তিনি নিজে তা বুঝতে পারছেন বলেই মনে করেন, প্যারিসে ‘রাজত্ব’ পুনরুদ্ধার করতে সময়টা তাঁর পক্ষে নেই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনে ছেলেদের এককে ফাইনাল আগামীকাল। কাল সেখানে থাকতে পারলে নাদাল হতেন এই টুর্নামেন্টে আধুনিক যুগে ফাইনালে ওঠা সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড়।
সেটি না হলেও আগামী বছর চেষ্টা করে দেখতে চান নাদাল, ‘এটা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট হলেও আমি জানি ১৫-১৬ বার তা জেতা যাবে না। সৃষ্টিকর্তা চাইলে আগামী বছর এখানে আসব, সব প্রস্তুতি সেরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বিশ্বাস নিয়েই আসব।’
জোকোভিচের সঙ্গে নাদালের দ্বৈরথের গল্প ১৫ বছরের। ৫৮তম দ্বৈরথে তাঁর কাছে হারলেন নাদাল। এই হার তাঁর বিপক্ষে জোকোভিচের সেরা পারফরম্যান্স কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে নাদালের প্রতিক্রিয়া, ‘না, আমি এটাই মনে করি। সে তো আমার সেরাটার মুখোমুখি হয়নি।’
কিন্তু জোকোভিচের কাছে এই জয় তাঁর ক্যারিয়ারের ‘অন্যতম সেরা।’ ফাইনালে স্তেফানোস সিতসিপাসের মুখোমুখি হওয়ার আগে নাদালের বিপক্ষে জয়কে মাউন্ট এভারেস্ট জয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন জোকোভিচ, ‘এমন অবিশ্বাস্য ম্যাচে নাদালের মুখোমুখি হওয়াটা আমার জন্য বিশেষ কিছু। প্যারিসে এটা আমার সেরা ম্যাচ। গোটা ক্যারিয়ারে সেরা তিনের মধ্যে থাকবে।’
নাদালের বিপক্ষে হার-জিতের পরিসংখ্যানে ৩০-২৮ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা জোকোভিচ বলেন, ‘রোলাঁ গারোঁয় রাফার অর্জনকে ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। প্রতিবার তার সঙ্গে খেলতে নেমে মনে হয় জিততে হলে মাউন্ট এভারেস্ট টপকাতে হবে।’
জোকোভিচ আরও একবার সেই ‘এভারেস্ট’ টপকানোর পর কি শিরোপার দেখা পাবেন?