নিজস্ব প্রতিবেদক
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া এফবি ভাই ভাই ও এফবি রফিক নামে বরগুনার দুটি ট্রলারে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এফবি ভাই ভাই ট্রলারে থাকা কামাল হোসেন (৩২) নামে এক জেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এছাড়াও এ ঘটনায় আরও কমপক্ষে ৮ জেলে আহত হয়েছেন।
শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে আহত জেলেদের নিয়ে ট্রলার দুটি বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের নলী চড়কগাছীয়া নামক এলাকায় এসে পৌঁছায়। আহত জেলে কামাল হোসেন ওই এলাকার বাসিন্দা ইউনুস পহল্লানের ছেলে।
এর আগে শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাতে বঙ্গোপসাগরে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির শিকার ট্রলার দুটির মালিক জাহাঙ্গীর মোল্লা ও মাসুম হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে এফবি ভাই ভাই এবং এফবি রফিক নামে দুটি ট্রলার নিয়ে ৩৫ জন জেলে সাগরে মাছ ধরতে যান। পরে গত রাতে সাগরে মাছ ধরা অবস্থায় ২০-২৫ জন ডাকাত একটি ট্রলার নিয়ে এসে ওই ট্রলার দুটিতে থাকা জেলেদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এ সময় ভাই ভাই ট্রলারে থাকা জেলে কামাল হোসেন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এছাড়াও ডাকাতের হামলায় ট্রলার দুটিতে থাকা কমপক্ষে আরও ৮ জেলে আহত হন। পরে ট্রলার দুটিতে থাকা জাল, মাছ এবং তেলসহ জেলেদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনগুলো লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা।
পরবর্তীতে আহত জেলেদের নিয়ে শনিবার বিকেলে ট্রলার দুটি বরগুনায় পৌঁছালে গুলিবিদ্ধ কামাল হোসেনকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এ সময় হাসপাতালে দায়িত্বর চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
আহত কামাল হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বলেন, গত পাঁচ-সাত দিন আগে আমার স্বামী সাগরে মাছ ধরতে যায়। আজকে তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে না পারায় কীভাবে কী হয়েছে তা এখনো জানতে পারিনি। সাগরে ডাকাতের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এমন খবর পেয়ে হাসপাতালে এসেছি।
ভাই ভাই ট্রলারের মালিক মাসুম হাওলাদার বলেন, সাত দিন আগে ট্রলার নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যান জেলেরা। মাছ ধরা শেষে প্রতিবার ঘাটের কাছাকাছি আসলে জেলেরা আমাদেরকে ফোনে জানান। তবে আজকে জেলেরা ঘাটে এসে সরাসরি আমার বাড়িতে গিয়ে জানায় ট্রলারে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইলসহ ট্রলারের বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। এ ঘটনায় প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এফবি রফিক নামের ট্রলারটির মালিক জাহাঙ্গীর মোল্লা বলেন, গত শনিবার আমার ট্রলার নিয়ে জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যায়। গতকাল রাতে তারা মাছ ধরা অবস্থায় ডাকাতের কবলে পড়েন জেলেরা। এ সময় ডাকাতের হামলায় ট্রলারে থাকা ৫-৬ জন জেলে আহত হয়েছেন। এছাড়াও ট্রলারের মেশিন ভাঙাসহ ট্রলারে থাকা মাছ, জাল এবং স্টাফদের মোবাইল নিয়ে গেছে ডাকাতরা। কোনোভাবে জেলেরা ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরে এসেছে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মোস্তফা কামাল বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা মোটামুটি ভালো আছে। তবে তার দুই পায়ে অসংখ্য স্প্লিন্টারের চিহ্ন রয়েছে এবং ভেতরে স্প্লিন্টার ঢুকে আছে। আর এ কারণেই স্প্লিন্টারগুলো অপসারণ করতে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াকুব হোসাইন বলেন, আমাদের থানা এলাকার মধ্যে যদি এমন ঘটনা ঘটে এবং সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাই, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।